মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগুন প্রতিরোধে ১৫ নির্দেশনা

অলআউট অ্যাকশনের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর ► বিল্ডিং কোডে ছাড় নয় ► ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র ছাড়া বহুতল ভবন নয় ► কঠোর ব্যবস্থা কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ► ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ► রাজধানীতে পানি সরবরাহ বাড়াতে জলাধার লেক খাল সংরক্ষণ ► আগুন নেভানো ও উদ্ধারে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ► অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে চাপ গ্রাহ্য নয়

মানিক মুনতাসির

আগুন প্রতিরোধে ১৫ নির্দেশনা

সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আগুন থেকে প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ দফা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীকে তিনি অলআউট অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশ দেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যেসব ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই সেগুলোকে চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া নকশা কিংবা বিল্ডিং কোড অমান্য করে নতুন করে যেন একটিও ভবন গড়ে উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করা, পানির সরবরাহ বাড়াতে এবং ঢাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে দখল হয়ে যাওয়া জলাধারগুলো পুনরুদ্ধারে সিটি করপোরেশন, রাজউক, গণপূর্ত অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের একযোগে কাজ  করার নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, অবৈধ বিল্ডিং কিংবা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অনেক প্রভাবশালী মহল থেকে চাপ আসে, ফোন আসে। এতে বিব্রত হতে হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিঘিœত হয়। গণপূর্তমন্ত্রীর কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিল্ডিং কোডে কাউকে এক চুলও ছাড় নয়। আপনি থাকবেন অলআউট অ্যাকশনে (সর্বাত্মক ব্যবস্থা)। এ ব্যাপারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাউজক) এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। এমনকি রাজউকের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পেলে সেখানেও দ্রুত এবং কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য আধুনিক ঢাকায় রূপান্তর করতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কিংবা বিল্ডিং কোড আমান্য করে গড়ে ওঠা যেসব বহুতল ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করা হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে পর্যায়ক্রমে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক অগ্নিকান্ডে র ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ব্রিফিং করেন। এ সময় তিনি বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সে সব নির্দেশনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা : বহুতল ভবন তৈরির সময় ফায়ার সার্ভিসের ক্লিয়ারেন্সের পাশাপাশি সেটা ‘ভায়াবল’ কি-না নিশ্চিত করা। অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। ফায়ার সার্ভিস থেকে যে অনুমোদন বা ছাড়পত্র দেওয়া হয় কারখানার মতো বহুতল আবাসিক ভবনেও তা প্রতি বছর নবায়নের ব্যবস্থা করা। বিল্ডিং কোড শতভাগ অনুসরণ করা। প্রতি এক থেকে তিন মাসের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া করা। অগ্নিকান্ডে র সময় ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু এড়াতে ভবনে ধোঁয়া নিষ্কাশন ও নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি অবলম্বন করা। পানির অভাবে অনেক সময় ফায়ার সার্ভিস কাজ করতে পারে না; তাই যেখানে সম্ভব জলাশয় বা জলাধার তৈরি করা। এ জন্য বেদখল হয়ে যাওয়া জলাধার, খাল ও লেকগুলো উদ্ধার করে তা সংরক্ষণ করা। বহুতল ভবনে ওঠার জন্য ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারের সংখ্যা বাড়ানো। প্রকৌশলীরা যেন পরিবেশ ও বাস্তবতার নিরেখে অবকাঠামোর নকশা করেন, তা নিশ্চিত করা। প্রতিটি কমার্শিয়াল, আবাসিক যে কোনো ধরনের বহুতল ভবনে ফায়ার এক্সিট নিশ্চিত করা। অনেক জায়গায় ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দরজা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফায়ার এক্সিট যেন সব সময় ওপেন থাকে, অর্থাৎ ম্যানুয়ালি যেন তা খোলা যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ যেন বহুতল ভবন থেকে তারপুলিনের মাধ্যমে ঝুলে নামতে পারে, সেই পদ্ধতি চালু করা। প্রতিটি হাসপাতাল ও স্কুলে বারান্দাসহ খোলা জায়গা রাখা। ভবনে আগুন লাগলে লিফট ব্যবহার না করা। প্রতিটি ভবনে কমপক্ষে দুটি এক্সিটওয়ে রাখা। আগুন নেভানোর আধুনিক সরঞ্জামাদি ক্রয়সহ ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ঢাকার ভবনগুলো পরিদর্শনের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২৪টি দল গঠন করেছে। এই দলগুলো ভবন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন : গতকালের বৈঠকে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা হুবহু রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইনের মতো। ওটাকে ফলো করা হয়েছে। এটাতে তেমন নতুন কিছু নেই। এখানে কতগুলো জিনিসকে অপরাধ হিসেবে মনে করা হয়েছে- ইমারত নির্মাণ, জলাধার খনন, উঁচু ভূমি ইত্যাদির বিষয়ে যে বিধিনিষেধ আছে তা অমান্য করলে অপরাধ হবে। অননুমোদিত নির্মাণাধীন স্থাপনা অপসারণ ও এতে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের একটা প্রভিশন করা হয়েছে।’

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুমোদন : বৈঠকে ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৯’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশে অন্য যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, এটিও সেগুলোর মতো একই আইন। অন্যান্য জায়গায় যে বিষয়গুলো আছে এখানেও একই বিষয়গুলো আছে। এখানে আচার্য থাকবেন রাষ্ট্রপতি। এটা পরিচালনার জন্য উপাচার্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে লোকবল থাকবেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিকভাবে তিনটি অনুষদ থাকবে- কৃষি অনুষদ, মৎস্য অনুষদ এবং প্রাণিচিকিৎসা ও প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞান। প্রয়োজন মনে করলে এর সঙ্গে আরও অনুষদ বাড়ানো যাবে।

সর্বশেষ খবর