মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

উত্তরপ্রদেশেই ভাগ্য নির্ধারণ

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

দশ দিন পরেই শুরু হচ্ছে ভারতের সপ্তদশ লোকসভা ভোট। ১১ এপ্রিল সাত ধাপে ভোট চলবে ৫৪৩টি আসনে ১৯ মে পর্যন্ত। ভোটের ফল ঘোষণা ২৩ মে। ভোট হবে ইভিএম মেশিনে। ভোটে অংশগ্রহণ করবেন ৮৫ কোটি ভোটার। পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশে ভোট হবে  সাত ধাপে। এই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ৩৭ দলের মোর্চা এনডিএ বনাম রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ইউপিএ জোট। জোট গঠনের দিক থেকে মোদি-অমিত শাহর শাসক বিজেপি এগিয়ে থাকলেও রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ময়দানে রয়েছেন।

প্রভাবশালী আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্রে মোদি বিরোধী আঞ্চলিক দলের সরকার গঠনের দাবিদার হলেও তিনি কোনো জোট ছাড়াই একা লড়ছেন পশ্চিমবঙ্গে। একমাত্র আসামে একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হিন্দি বলয়ের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী ও মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিং-এর পুত্র অজিত সিং-এর রাষ্ট্রীয় লোকদল জোট বেঁধে ৮০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এই প্রদেশে প্রথমে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে এই আঞ্চলিক দলগুলো কংগ্রেসকে জোটে নেয়নি। কেবল সোনিয়া গান্ধীর রায় বেরিলি ও রাহুলের আমেথিতে তারা কোনো প্রার্থী দেননি। তেমনি কংগ্রেস দল ও জোটে শামিল না হলেও ওই আঞ্চলিক দলগুলোর প্রথম সারির নেতাদের সাতটি আসনে কোনো প্রার্থী দিচ্ছেন না। তবে অন্য আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিজেদের মধ্যে হওয়ার ফলে ভোট ভাগাভাগিতে শাসক বিজেপির সুবিধা হয়ে যেতে পারে। গতবার এই রাজ্য থেকে বিজেপি ৮০টির মধ্যে ৭৩ আসনে জয়লাভ করেছিল। সেটাই হয়েছিল মোদির তুরুপের তাস। উত্তরপ্রদেশ ভারতের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ করে বলে এবার এই প্রথম কংগ্রেস প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে দলের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে সেখানে প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছে। ফলে এই নির্বাচনে প্রমাণ হবে হিন্দি বলয়ে আদৌ গান্ধী ম্যাজিক প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাবমূর্তিকে ম্লান করতে পারে কিনা। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনী আঁতাত গড়ার ক্ষেত্রে বিজেপি কৌশলী পরিচয় দিয়ে জাতীয় কংগ্রেসকে কিছুটা হলেও পেছনে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগ পর্যন্ত বিজেপির শরিকদের ক্রমাগত বিক্ষোভ মোদি-অমিতকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু দিন যত এগিয়েছে একে একে প্রত্যেক শরিকের সঙ্গে বিজেপি আসন সমঝোতা করে ফেলেছে। এই প্রথম বিজেপির শরিক হচ্ছে বিহারের নীতিশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল এবং তামিলনাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার এআইএডিএমকে। বিহারে গতবার ভোটে ২৩ আসনে বিজেপি জয়ী হলেও এবার নীতিশ কুমারের দলকে সঙ্গে নিতে তারা ছয়টি আসনে কম লড়বে। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে বিবাদ চললেও শেষ পর্যন্ত অমিত শাহ নিজে মাথা নিচু করে উদ্ধব ঠাকুরের দলের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। সব মিলিয়ে বিজেপি নিজে ৪৩৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বাকি আসন শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আসামে আসাম গণপরিষদ এনডিএ ছেড়ে দিয়েছিল। সেই বিল প্রত্যাহার করে বিজেপি ফের আসাম গণপরিষদের সঙ্গে সমঝোতা করে ফেলেছে। উত্তরপূর্ব ভারতের প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে পেরেছে অমিত শাহরা।

অন্যদিকে জাতীয় কংগ্রেস এখন পর্যন্ত ৪২৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বামদের সঙ্গে সমঝোতা ভেঙে  গেছে। কেরালায় রাহুল গান্ধী নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বামরা তার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে। উত্তরপ্রদেশে কোনো সমঝোতা না হলেও বিহারে শেষ মুহূর্তে লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। এই প্রথম সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার জনতা সেক্যুলারের সঙ্গে কংগ্রেস কর্ণাটকে সমঝোতা করে বিজেপিকে বেগ দিতে সক্ষম। মহারাষ্ট্রে শারদ পাওয়ারের এনসিপি এবং তামিলনাড়ুর করুণানিধির ডিএমকের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। তবে বিজেপির তুলনায় সমঝোতায় আসন সংখ্যায় কংগ্রেস পিছিয়ে। নির্বাচনে শাসক বিজেপি প্রধানমন্ত্রী মোদির বলিষ্ঠ নেতৃত্বকেই হাতিয়ার করেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিমান হানা এবং মহাকাশে স্যাটেলাইট ধ্বংস করার ক্ষমতা প্রদর্শন করে মোদির সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বকেই তুলে ধরছেন। অন্যদিকে বিরোধীদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদের কোনো প্রার্থী নেই। সেটাই বিজেপির হাতিয়ার। বিরোধীদের মধ্যে মোদির বিকল্প কে? এটা একটা বিশেষ সুযোগ করে দিচ্ছে বিজেপিকে। এ ছাড়া বিজেপি নেতারা হিন্দুত্ববাদী প্রচারকে সামনে এনে মেরুকরণ করার প্রয়াস করছেন, হিন্দি বলয়ে সেটা মোকাবিলা করা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধীদের।

অন্যদিকে কংগ্রেস পাঁচ বছরের মোদি সরকারের ব্যর্থতা এবং প্রতিশ্রুতি পালন না করার অভিযোগ আনছে। বিশেষ করে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি পালন না করা। তার সঙ্গে বেকারত্ব। এজন্য রাহুল এবার ঘোষণা করেছেন কংগ্রেস দল ক্ষমতায় এলে ন্যূনতম আয়ের গ্যারান্টি দেবে গরিবদের। মাসে ছয় হাজার রুপি। এখন পর্যন্ত ভারতে গণমাধ্যমে যতগুলো ভোট জরিপ হয়েছে তাদের বেশির ভাগ মোদির দল বিজেপিকে এগিয়ে রাখলেও নিরঙ্কুুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব নয় বলে জরিপের পূর্বাভাস। ফলে এই নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু লোকসভা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে প্রধানমন্ত্রীর পদে মোদি এগিয়ে রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর