মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিএসএমএমইউ পরিচালকের ব্রিফিং

খালেদার পায়ে ব্যথা খাবারে অরুচি দুর্বলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদার পায়ে ব্যথা খাবারে অরুচি দুর্বলতা

চিকিৎসার জন্য কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে ফের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসনকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে, হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসার পর তাঁকে সেখান থেকে সরাসরি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে বিএসএমএমইউতে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের কেবিন ব্লকের সামনে কালো পাজেরো জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৪২১২৭) থেকে নামার পর হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মাহবুবুল হক ও অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করিম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর কারা কর্তৃপক্ষের সদস্য ও চিকিৎসকরা তাঁকে হুইল চেয়ারে করে ছয় তলায় নিয়ে যান। এ সময় বেগম জিয়াকে বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছিল। এর আগে বেলা ১১টায় পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়ার মালামাল, সুটকেসসহ আসবাবপত্র একটি ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। এসব মালামালে একটি বেড, দুটি সুটকেস, চেয়ার, প্লাস্টিকের ওয়ারড্রোব, ছোট একটি ফ্রিজ ইত্যাদি। সকাল ১০টা থেকেই কেবিন ব্লকের কাছে ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। একইভাবে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারেও সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপকসংখ্যক সদস্য উপস্থিতি ছিলেন। খালেদা জিয়া হাসপাতালে আসার সংবাদ পেয়ে বেলা ১১টা থেকে কেবিন ব্লকের কাছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মহিলা দল সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্মসম্পাদক হেলেন জেরিন খান, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে আসার সময় কেবিন ব্লক থেকে ২০০ গজ দূরে পুলিশি নিরাপত্তার বাইরে হেলেন জেরিন খানের নেতৃত্বে মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপি-প্রধানের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।

মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে গত বছরের ৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় প্রায় এক মাস চিকিৎসা শেষে আবার তাঁকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিসসহ বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করার সময় তাঁকে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী মার্চের শুরুতেও খালেদা জিয়াকে একবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ পরে জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন রাজি না হওয়ায় তাঁকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেওয়া যায়নি। পরে বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ওপর খালেদা জিয়ার আস্থা নেই, তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান। হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করিম বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল জলিল চৌধুরী অবসরে চলে যাওয়ায় তার স্থলে ইন্টারনেল মেডিসিনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকারকে বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন রিউমোটলজি বিভাগের অধ্যাপক আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিলা পারভিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ ও অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইকবাল আহমেদ। বোর্ডকে সহযোগিতা করার জন্য রয়েছেন রিউমোটলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীম আহমেদ ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিসক ডা. মামুন।

খালেদা জিয়ার হাতপায়ে ব্যথা আছে : বিএসএমএমইউতে ভর্তি হওয়া কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাহবুবুল হক। গতকাল দুপুরে ৬২১ নম্বর কেবিনে খালেদা জিয়াকে মেডিকেল বোর্ড দেখে আসার পর বেলা আড়াইটায় এক সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক এ কথা জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন তাঁর সমস্যা বেশি হচ্ছে পা ও হাতে ব্যথা। পায়ের জয়েন্ট ও হাতের জয়েন্টেও ব্যথা আছে। তাঁর ডায়াবেটিস আছে যা এখন স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি। আজকে খাওয়ার পর র‌্যানডম এসেছে ১৪। তিনি একটু দুর্বল আছেন, ঘুম কম হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়ায় রুচি নেই।’ তিনি জানান, ‘বেগম খালেদা জিয়া এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আছেন ৬২১ নম্বর কেবিনে। তাঁর মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্য কিছুক্ষণ আগে তাঁকে দেখে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। ওষুধ প্রেসক্রাইব করে দিয়ে এসেছেন বোর্ড। আজকে থেকে ওই ওষুধ সেবন করবেন। তাঁর চিকিসা শুরু হয়েছে।’ বেগম জিয়া কী কী সমস্যায় ভুগছেন- প্রশ্ন করা হলে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘তাঁকে দেখার সময়ে বোর্ডের সঙ্গে আমিও ছিলাম। তাঁর শারীরিক অবস্থা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সদস্যরা জিজ্ঞাসা করেছেন। তাঁর কাছে শুনে সে অনুযায়ী ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়েছে।’

বর্তমান বোর্ডের প্রতি আস্থা আছে কিনা- প্রশ্ন করা হলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক বলেন, ‘আমরা যে বোর্ড করেছি তার প্রতি তাঁর যথেষ্ট আস্থা আছে। আজকে উনি বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেছেন। উনারা যা জানতে চেয়েছেন সবকিছু উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন। বোর্ডের সদস্যরা যে চিকিৎসাপত্র দিয়েছেন তা উনার সঙ্গে কথা বলেই দিয়েছেন। আমিও উপস্থিত ছিলাম। আমি মনে করি উনি হ্যাপি এই বোর্ডের ওপর।’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে কিনা- জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ‘পরীক্ষা কয়েকদিন আগে করা হয়েছে। আজকে বোর্ড কিছু দেয়নি। আপাতত কিছু লাগবে না।’ তিনি জানান, ৬২১ নম্বর কক্ষে খালেদা জিয়া আছেন। তাঁর পাশের কেবিনটিও বরাদ্দ করা হয়েছে তাঁর জন্যই। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা আছেন। হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘প্রতিদিন একজন চিকিৎসক তাঁর শারীরিক অবস্থা কত উন্নতি হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করবেন। একজন চিকিসক প্রতিদিন সেখানে থাকবেন। রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি হবে। ইন এডিশন যদি লাগে তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর সম্ভাবনা আছে কিনা- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা উনার (খালেদা জিয়া) যে সমস্যা দেখেছি তাতে মনে হয়নি যে, উনি এমন কোনো জটিল রোগে ভুগছেন যে চিকিৎসা বিএসএমএমইউতে সম্ভব নয়।’ বেগম জিয়া কত দিন হাসপাতালে থাকতে পারেন- এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে দুটি জিনিস হতে পারে। উনার সমস্যা যদি দ্রুত ইমপ্রুভ করে তাহলে উনি চলে যেতে পারেন। আর যদি উনি মনে করেন যে, উনি এখানে কমফর্টেবলি থাকতে চান আমাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি থাকবে না।’

সর্বশেষ খবর