বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

উপজেলা নির্বাচনে যত অনিয়ম

বাতিল সাড়ে ৫ লাখ ভোট

গোলাম রাব্বানী

উপজেলা নির্বাচনে যত অনিয়ম

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চার ধাপে চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে গড়ে ৪০ শতাংশের মতো। এর মধ্যে ২ দশমিক ২ শতাংশ ভোট গেছে বাতিলের খাতায়। এর পরিমাণ ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭২৯ ভোট। চার ধাপে সাড়ে চারশ উপজেলায় ভোট হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, জাল ভোট ও আগের রাতে সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে এবার বাতিল ভোটের পরিমাণ বেশি হয়েছে।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে শতাধিক উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি উপজেলাগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। আর এক-তৃতীয়াংশ উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছেন, যাদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। এবার ৩০টি উপজেলায় সব পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোটের প্রয়োজন হয়নি। ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চার পর্বে ৬ কোটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ ভোটারের মধ্যে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৭ জন ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ- ভোটের হার দাঁড়াচ্ছে ৪০.৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭২৯ ভোট বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়ে গেছে, যা মোট প্রদত্ত ভোটের ২.২ শতাংশ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ভোটারদের অসচেতনতা, ব্যালট পেপারে একাধিক প্রতীকে সিল, ভাঁজ ঠিকমতো না করা, কালি ছড়িয়ে ফেলা, প্রতীকের ঘরের বাইরে সিল মারা, অনিয়মের প্রবণতাসহ নানা কারণে ভোট বাতিল হয়। ধীরে ধীরে প্রযুক্তির দিকে গেলে, ইভিএম ব্যবহার বাড়ালে বাতিল ভোটের হারও কমে আসবে। ইসির যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, সবাই সচেতন থাকলে ভোট বাতিল হওয়ার সুযোগ থাকে না। পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবারের উপজেলা নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট এ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে তা দশম সংসদ নির্বাচনের বাতিল ভোটের দ্বিগুণের বেশি। দেশের ১৪৭ আসনে (১৫৩ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) ওই সংসদ নির্বাচনেও ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। আর গত বছর ডিসেম্বরে হয়ে যাওয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এখনো বিস্তারিত পরিসংখ্যান প্রকাশ না করায় বাতিল ভোটের হার জানা যায়নি।

প্রথম ধাপ : ভোটার- ১ কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার ৬৩ জন; ভোট পড়েছে ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫১২টি; ভোটের হার ৪৩.৩২ ভাগ; বাতিল হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৩৫৪ ভোট; মোট বৈধ ভোট ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৮টি। প্রথম ধাপে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪১৭ ভোট বাতিল হয়েছে নাটোরের সিংড়ায়। আর সর্বনিম্ন ৪৮৯ ভোট বাতিল হয়েছে রাজশাহীর বাগমারায়।

দ্বিতীয় ধাপ : ভোটার- ১ কোটি ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৯০৭ জন; ভোট পড়েছে ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭৪টি; ভোটের হার ৪১.২৫ ভাগ; বাতিল হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৪ ভোট; মোট বৈধ ভোট ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬টি। এ ধাপে শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩২৬টি ভোট বাতিল হয়। থানচিতে বাতিল হয় সর্বনিম্ন ৬৭ ভোট।

তৃতীয় ধাপ : ভোটার- ১ কোটি ৮২ লাখ ১ হাজার ৭৭০ জন; ভোট পড়েছে ৭৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৬টি; ভোটের হার ৪১.৪১ ভাগ; বাতিল হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৩ ভোট; মোট বৈধ ভোট ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৭টি। এ ধাপে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৮ ভোট বাতিল হয় মিঠাপুকুর উপজেলায়। ঝিনাইদহের হরিণাকু ু ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে একটি ভোটও বাতিল হয়নি।

চতুর্থ ধাপ : ভোটার- ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮১ জন; ভোট পড়েছে ৬০ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৫টি; ভোটের হার ৩৬.৫০ ভাগ; বাতিল হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৮ ভোট; মোট বৈধ ভোট ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ২৭১টি। চতুর্থ ধাপে ঈশ্বরগঞ্জে একটি ভোটও বাতিল হয়নি। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬০০ ভোট বাতিল হয়েছে।

সর্বশেষ খবর