বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

রংপুরে জাপার দুর্গে বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুরে জাপার দুর্গে বিপর্যয়

এক সময়ের দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরে দুর্বল হয়ে পড়ছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের সঙ্গে অংশ নিয়ে রংপুর অঞ্চলে ৭টি আসনে জয় পেলেও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশ জায়গায় প্রার্থীই দিতে পারেনি দলটি। ১৯৯৬ সালে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে ২১টিতেই জয় পায় জাতীয় পার্টি। এরপর থেকে দলটি এ অঞ্চলে তাদের আসন কমার পাশাপাশি বিগত সময়ে দলীয়ভাবে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এবারে রংপুরের ৮ উপজেলার মধ্যে শুধু পীরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নিজেদের ইমেজ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। পীরগাছায় জাতীয় পার্টি জয় পেলেও বাকি ৭ উপজেলাতেই দলটির অবস্থা শোচনীয়। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, মিঠাপকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রার্থীই দিতে পারেনি দলটি। এ ছাড়া বিভাগের অন্য উপজেলাগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটিতে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী থাকলেও কেবল দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় জয় পেয়েছে জাতীয় পার্টি।

রংপুর জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে জাতীয় পার্টির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন রংপুর সদর উপজেলা। কিন্তু এ আসনটিতে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি দলটি। ৮ উপজেলার ৭টিতেই চেয়ারম্যান পদে জিতেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতা ও দলের কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে জিএম কাদেরের অব্যাহতির ফলে দলের সংসদীয় কমিটির মধ্যে বিভক্তি ঘটেছে। এ কারণে উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি দলের কেউ। এদিকে উপজেলা নির্বাচনে নিজ ঘাঁটিতে জাতীয় পার্টির পরাজয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন দলটির তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা। জাতীয় পার্টির একাধিক কর্মী-সমর্থক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে বিভিন্ন রকম যোগসাজশের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচনে নিজ ঘাঁটিতে শোচনীয় অবস্থা জাপার। এ রকম চলতে থাকলে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে পরিচিত রংপুর জেলাতে চিরতরে প্রভাব হারাবে জাপা। এ বিষয়ে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য ও রংপুর জেলা যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান নাজিম বলেন, জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ উপজেলা নির্বাচনের আগে থেকেই খুবই অসুস্থ ছিলেন। অন্যদিকে জিএম কাদেরকে কো- চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় দলের সংসদীয় কমিটিতে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি। এতে নির্বাচনের প্রতি জনগণেরও অনাস্থা তৈরি হয়েছে। সরকারি দলের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে কিছু উপজেলায় জাপা প্রার্থী দিতে পারেনি। এ বিষয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্বহীন করে দেখেছে দলের নেতারা। অন্যদিকে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাপা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যার ফলে উপজেলা নির্বাচনগুলোতে জাপার এমন সংকটময় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর