শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে জনস্রোতে ভাসলেন রাহুল গান্ধী

গান্ধী-নেহেরু পরিবারের প্রথম হিসেবে দক্ষিণ ভারতে কেরালায় মনোনয়ন জমা রাহুলের

দিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে জনস্রোতে ভাসলেন রাহুল গান্ধী

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ভারতের কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। নিয়মিত আসন উত্তর প্রদেশের আমেথির পাশাপাশি এবার দক্ষিণ ভারতের নতুন আসনে লড়তে যাচ্ছেন কংগ্রেসের নতুন সভাপতি। গতকাল দুপুরে দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের ‘ওয়ানাড়’ কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে জেলা কালেক্টরের অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেন রাহুল। গান্ধী-নেহেরু পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে কেরালার কোনো আসনে লড়বেন তিনি। বোন ও দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া রাহুল গান্ধীকে অবশ্য সাদরেই গ্রহণ করেছেন দক্ষিণ ভারতীয়রা। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরই প্রচারণায় নামা রাহুল-প্রিয়াঙ্কার হুড খোলা গাড়ি গতকাল ভেসেছে জনসমুদ্রে।

রাহুল-প্রিয়াঙ্কার রোডশোকে কেন্দ্র করে উদ্দীপনা ছিল দেখার মতো। হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মীরা অংশ নেয় এই রোডশোয়ে। কেরালা কংগ্রেস ও তাদের জোট সঙ্গী ইন্ডিয়া ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল)-উভয় দলের পতাকা হাতে নিয়ে যেমন হাজির ছিলেন দলের কর্মী-সমর্থকরা তেমনি রাহুলকে স্বাগত জানাতে দুই পাশে সাধারণ মানুষের ঢলও ছিল চোখে পড়ার মতো। হুড খোলা গাড়িতে ছিলেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা। অনেকেই রাহুলের হাত ছোঁয়ার চেষ্টা করেন। রোডশোয়ের সেই ছবি অনেকেই আবার মোবাইলে ধারণ করেন। রাহুলের রোডশো কভার করতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে পড়ে যান দুই সাংবাদিক। পরে তাদের উদ্ধার করেন রাহুল নিজে। রোডশো শেষের পরই রাহুল-প্রিয়াঙ্কা উভয়েই কোঝিকোড়ের উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গে ছিলেন কেরালা কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা রমেশ চেনিথালা, রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমান চ ীসহ দলের রাজ্য নেতারা। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, কেরালায় একটা বার্তা নিয়ে এসেছি, তা হলো ‘ভারত একটাই-সেটা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব বা পশ্চিম যাই হোক না কেন। আমার লক্ষ্য হলো, দক্ষিণ ভারতে একটা অনুভূতি আছে যে, কেন্দ্রে মোদিজি এবং  আরএসএস যেভাবে কাজ করছে সেটা দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতি ও ভাষার ওপর অত্যাচার।’ রাহুল আরও বলেন, ‘আমি জানি সিপিআইএম আমার বিরুদ্ধে লড়াই করবে, আমাকে নিশানা করবে কিন্তু আমি তাদের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলব না।’ দক্ষিণ ভারতের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে রাহুলের বিপক্ষে বামদের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে পিপি সুনীরকে এবং বিজেপি টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন তুষার ভেল্লাপল্লি। যদিও এ আসন থেকে রাহুলের প্রার্থী হওয়ায় মোটেই খুশি হয়নি কেরালার বাম নেতৃত্ব। বিজেপিবিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কংগ্রেসকে তোপ দেগেছে বামরা। রাহুলকে উচিত শিক্ষা দিতে চায় তারা। বাম নেতৃত্ব রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে বলেছে, কীভাবে নির্বাচনে লড়াই করতে হয় তা এবার রাহুলকে শেখানো হবে। পাশাপাশি ভোটের ময়দানে একচুল জমিও ছাড়া হবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে তারা। এদিকে ওয়ানাড়ায় রাহুলের মনোনয়ন জমা দেওয়ায় আমেথিতে রাহুলের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির স্মৃতি ইরানি বলেন, এ ঘটনা আমেথির মানুষের পক্ষে অপমানের। তিনি বলেন, ‘আমেথির মানুষের সমর্থন নিয়ে উনি পনেরো বছর ধরে ক্ষমতা ভোগ করেছেন, কিন্তু এবার উনি অন্য জায়গা থেকে মনোনয়ন জমা দিলেন। এ ঘটনা আমেথির মানুষের পক্ষে অপমানের। এখানকার মানুষ এটা মেনে নেবে না।’ যদিও কোনো সমালোচনাই গায়ে মাখছে না কংগ্রেস। রাহুলের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত তার দল। বিরোধীদের জবাবে রাহুল নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘ওখানে অনেকেই আমাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছিলেন। দক্ষিণ ভারতের মানুষ মনে করেন বর্তমান সরকার তাদের অবহেলা করেছে। এখানকার মানুষ মোদিকে নিয়ে বীতশ্রদ্ধ।’ কংগ্রেসের অন্দর মহলের ধারণা, এ ঘটনার ফলে গোটা দক্ষিণ ভারতেই কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করবে। শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে সরকার গড়তে গেলে দক্ষিণে ভালো ফল অত্যন্ত জরুরি হয়ে দেখা দেবে। আগামী ২৩ এপ্রিল ওয়ানাড়ে লোকসভার ভোট, অন্যদিকে আমেথিতে নির্বাচন আগামী ৬ মে। উত্তর কেরালার ওয়ানাড়ে নির্বাচনী কেন্দ্রটি সম্প্রতিই তৈরি হয়েছে। ডিলিমিটেশনের পর, ২০০৯ সালে এই আসনের সূচনা। এ আসনকে আদিবাসী অধ্যুষিত বলা চলে। এখানে কংগ্রেসের সমর্থন যথেষ্ট। এর আগের দুবারের ভোটেই এখান থেকে জিতেছিলেন কংগ্রেসের এমআই শ্রিনিবাস । তিনি গত বছর মারা যান। তবে ২০১৪ সালের ভোটে তার মার্জিন কমেছিল অনেকটাই। কংগ্রেস এখানে জয় দেখতে পাচ্ছে আরও একটি কারণে। যে সাতটি বিধানসভা নিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্র, তার মধ্যে তিরুবামবাডি এবং এরনাড বিধানসভা কেন্দ্র দুটি কংগ্রেসের সঙ্গী মুসলিম লিগের দুর্গ বলে পরিচিত।

সর্বশেষ খবর