শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি, চুক্তি সম্পাদন করেছি এবং তাদের (মিয়ানমার) সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এদের (রোহিঙ্গা) নিজ দেশে ফেরত পাঠানোটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এখনো কাজ করে যাচ্ছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা ঝগড়া বাধাতে যাইনি। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’ রাজধানীর শেরেবাংলানগরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাসসের। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের অংশ হিসেবে এদিন প্রথমবারের মতো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এ নীতিতেই তার সরকার বিশ্বাসী এবং সেই নীতিতেই সরকার পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটাই বলব, মিয়ানমার যেহেতু আমাদের প্রতিবেশী আমরা কখনো তাদের সঙ্গে সংঘাতে যাব না। বরং আলোচনার মাধ্যমে তাদের নাগরিকদের তারা যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায় সে প্রচেষ্টাই আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। সে বিষয়ে সবাই যেন সেভাবেই দায়িত্ব পালন করেন, সেজন্যও আমি অনুরোধ করব।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়াটা আজকে বিশ্বের অনেকের কাছেই বিস্ময়।’ কেবল মানবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণেই এটা করেছি। নিজেদেরও বলতে গেলে রিফিউজি হিসেবে পঁচাত্তরের পরে ছয় বছর বিদেশে অবস্থান করতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, নিজের নামটাও আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। এ রকম দিনও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না। আমরা যুদ্ধ করতে চাই না, সবার সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। তবে কেউ আমাদের আক্রমণ করলে তা রোধ করার প্রস্তুতিটা রাখতে হবে।’ সেনাবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সামছুল হক, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূঁইয়া, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং পদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসে স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘এ জায়গাটা আমাদের অনেক স্মৃতিবিজড়িত জায়গা।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে এখানেই অফিস করেছেন। তখন এটাই ছিল তার অফিস। আর আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হিসেবে যেটা ব্যবহার করছি সেটা ছিল পার্লামেন্ট হাউস।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হচ্ছে তার প্রতিরক্ষা। একটি দেশকে কীভাবে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়, আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো, এখান থেকেই সেগুলো কার্যকর করা হয়। আমাদের দেশের আবহাওয়া জলবায়ু থেকে শুরু করে অনেক কাজই হয় এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে।’ স্বাভাবিকভাবেই সরকার গঠনের পর সব সময় এই মন্ত্রণালয়টি তিনি নিজের কাছেই রাখেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে যেমন আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা যাচ্ছে, তেমনি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ুর প্রভাব নিয়ে কাজ করারও একটা সুযোগ আমাদের রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হলো এখন শান্তি রক্ষার জন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যাচ্ছে (শান্তিরক্ষা মিশনে), পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যাচ্ছে। আমাদের যারা সেখানে যাবে আমি মনে করি, বিশ্ব পরিবর্তনশীল, সেখানে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন হচ্ছে। কাজেই আমাদের যারা সেখানে যাবে তারা সব বিষয়েই পারদর্শী হবে সেটাই আমরা চাই। এটা একান্তভাবে দরকার।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সর্বশেষ খবর