শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

হাত-পায়ের ব্যথা কমছে না খালেদার

মাহমুদ আজহার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি কোনো কিছুই খেতে পারতেন না। এখন খাওয়ায় কিছুটা রুচি আসছে। তবে হাত-পায়ের জয়েন্টে আগের মতোই ব্যথা রয়েছে। ওষুধ খেয়ে তিনি ঘুমাচ্ছেন। হাত-পা নাড়া-চাড়া করার চেষ্টা করছেন বেগম জিয়া। সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড ও বিএনপি সমর্থিত একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বঙ্গবন্ধুতে আসার পর বেগম জিয়ার ফিজিও থেরাপি নেওয়া বন্ধ রয়েছে। তার সমস্যার মধ্যে অন্যমত ছিল অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। খাবার পর সুগারের মাত্রা ছিল সাড়ে ১৫ থেকে ১৬। গতকাল দুপুরে খাবার পর তার সুগার মাত্রা সাড়ে ১১ এ চলে আসে। ক্রমেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে। তাঁর আগের ওষুধপত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত সোমবার চিকিৎসার জন্য কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। তার জন্য কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ করা হয়। তার সঙ্গে রয়েছেন গৃহকর্মী ফাতিমা। পাশের ৬২২ নম্বর কেবিনে তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত কারারক্ষীরা রয়েছেন। কারাবিধি অনুযায়ী ছোট্ট একটি টিভি দেওয়া হয়। তিনি শুধু বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) দেখতে পাচ্ছেন। এ ছাড়া একটি বাংলা দৈনিকও তার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। হাসতাপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবারই খাচ্ছেন বিএনপি প্রধান। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, খাবার নিয়ে বিশেষ কোনো আগ্রহ নেই বেগম জিয়ার। রুটি, সুপ, সবজি, মাছের ঝোল, লাউয়ের তরকারি ও মুরগির মাংস তার পছন্দের। সে রকম খাবারই তাঁকে সরবরাহ করা হচ্ছে। কারাগারের তুলনায় বেগম জিয়া হাসপাতালে একটু ঘুমাচ্ছেন। তবে তাকে ঘুমের ওষুধ সেবন করতে হচ্ছে। আগের মতোই তিনি একা উঠে বসতে কিংবা দাঁড়াতে পারছেন না। তাকে সবসময়ই গৃহকর্মী ফাতিমার সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। তবে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে এখন তিনি হাসিমুখে কথা বলছেন।

সোমবার ভর্তির সময় বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাহবুবুল হক গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, বেগম জিয়া এখানে আসার দিন থেকে আজকে তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি ভালো আছেন। ওষুধ খাচ্ছেন। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ড যেসব ওষুধ দিয়েছেন, তা তিনি খাচ্ছেন। এ জন্য কিছু সময় লাগে। একদিনে তো হয় না। এটা কনট্রোল হয়ে যাবে। তার ঘুমও হচ্ছে।’ আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. জিলন মিঞা সরকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দেখভাল করছে। গতকাল দুপুরেও তারা বেগম জিয়াকে দেখে আসেন। মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, রিউমেটোলজি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিলা পারভিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ ও অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চৌধুরী ইকবাল মাহমুদ। খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জিলন মিঞা সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন। আমাদের সঙ্গে হাসিখুশিতে কথাবার্তা বলেছেন। তার হাত-পায়ে ব্যথা কমে আসছে। ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে আসছে। আগের চেয়ে তার স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি হয়েছে।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ডায়াবেটিস আগের চেয়ে কিছুটা কম। তবে হাত ও পায়ের জয়েন্টে ব্যথা রয়েছে। তিনি ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছেন। কারাগারে তাকে ফিজিও থেরাপি দেওয়া হতো। এখানে গত চার দিনেও তা শুরু হয়নি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে হতে পারে বলে শুনেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আমরা তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।’

সর্বশেষ খবর