শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের শীর্ষ পাঁচে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের শীর্ষ পাঁচে বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে ধীরগতি সত্ত্বেও দ্রুত উদীয়মান বা বর্ধনশীল দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ বিশে^র উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যেও একই স্থান দখল করেছে। এ তালিকার অন্য দেশগুলো হচ্ছে- ভারত, রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া এবং ভুটান। চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট এপ্রিল-২০১৯ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন কান্ট্রি ডিরেক্টর রবার্ট জে সউম। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, এই প্রবৃদ্ধি অনেক, বিশ্বে যে পাঁচ দেশের জিডিপি সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বর্তমানে বিশ্বে ইথিওপিয়া (৮ দশমিক ৮ শতাংশ), রুয়ান্ডা (৭ দশমিক ৮ শতাংশ), ভুটান (৭ দশমিক ৬ শতাংশ) এবং ভারতের (৭ দশমিক ৫ শতাংশ) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যাংক খাতের সংস্কার, রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ অর্থনীতির বড় বড় খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি। টেকসই উচ্চতর প্রবৃদ্ধি রাখতে সংস্কারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম দুর্বল খাত। এ জন্য আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। রাজস্ব আদায়ে জোর দিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায় প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। তবে সরকার যে প্রক্রিয়ায় খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিকল্পনা করছে তার সমালোচনা করেন ড. জাহিদ হোসেন। একই ব্যক্তি বার বার পুনঃ তফসিলি করার সুযোগ পাচ্ছেন। সবাই কিন্তু অনিচ্ছাকৃত খেলাপি নন। ফলে সুযোগ দেওয়ার সময়ও এটাকে বিবেচনায় নিতে হবে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেই বেশি। বেসরকারি খাতে তুলনামূলক অনেক কম খেলাপি ঋণের পরিমাণ। জাহিদ হোসেন ব্যাংক খাতে শঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়লে ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়ে। এতে ঘূর্ণিঝড় নয়, মেঘ ঘনীভূত হবে। সরকার আশা করছে এ বছর ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে।

এডিবিও বলছে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। অথচ বিশ্বব্যাংক কম বলছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা টেকসই প্রবৃদ্ধির কথা বলছি। কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির কথা আমরা বিবেচনা করছি না। তাই এ বছর অন্তত ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। এটা বিশে^র উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া রপ্তানি ‘পারফরম্যান্স’ প্রবৃদ্ধিতে বাড়তি অবদান রাখছে। এর পাশাপাশি কৃষি ও শিল্প খাতের সম্প্রসারণ প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, এখন সরকারকে ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং খেলাপি ঋণ আদায়, কর কাঠামোর পুনর্বিন্যাস, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মানব সম্পদের সক্ষমতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এসব করতে পারলে ২০৩১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত স্বীকৃতি এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ উচ্চ আয় তথা আধুনিক ও উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। সরকারের রাজস্ব আয়ের ব্যাপারে জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ, যা সাম্প্রতিককালের মধ্যে সর্বনিম্ন।

 

সর্বশেষ খবর