শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
আগুন লাগলে সেলফি না তুলে এক বালতি পানি আনুন

নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি থাকলে আমেরিকার জানানো উচিত

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি থাকলে আমেরিকার জানানো উচিত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সজাগ। দেখলাম আমেরিকা একটা সিকিউরিটি অ্যালার্ট দিয়েছে। কি কারণে তারা অ্যালার্টটা দিল সেটা কিন্তু আমাদের কাছে বলেওনি, ব্যাখ্যাও দেয়নি। তারপরও নিরাপত্তা নিয়ে কোনো হুমকি থাকলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জানানো উচিত। গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, যদিও আমি ইতিমধ্যে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছি যে, কী কারণে অ্যালার্ট দিয়েছে তাদের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না জানতে। যদি কোনো তথ্য থাকে, কোন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে তাদের একটা দায়িত্ব আছে আমাদের অন্তত সেই বিষয়টা জানানো। যেন আমরা তা মোকাবিলা করার ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু হঠাৎ আগুন লেগেছে- আগুন তো সব দেশেই লাগে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই আমেরিকাতেও একটা সার কারখানা থেকে শুরু করে হাসপাতাল সবই পুড়ে শেষ। কতজন মারা গেছে সেই খবর কেউ জানেও না। এ রকম বহু ঘটনা ঘটেছে। লন্ডনে আগুন লেগে ৭০ জন মারা গেল। আরও যে কত লোক মারা গেছে সেটার হিসাবও নেই। সেখানে হিসাবও হয় না। উদ্ধার কাজও আমাদের মতো এতদিন কেউ চালায় না। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস একটি বিশ্ব সমস্যা। এই সন্ত্রাস শুধু আমাদের দেশে না, সারা বিশ্বের সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশে অন্তত সফলতার সঙ্গে এই জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছে। আমরা যথেষ্ট সজাগ, আমাদের ইন্টেলিজেন্স সব সময় সজাগ। আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় সতর্ক।

আগুন লাগলে সেলফি না তুলে এক বালতি পানি আনুন : অগ্নিকাণ্ডের স্থানে মানুষের সেলফি তোলা এবং অযথা ভিড় করার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চৈত্র-বৈশাখে আমাদের দেশে আগুন লাগার একটা প্রবণতা থাকে। এটা ছোটবেলা থেকেই আমরা দেখে আসছি। কোথাও আগুন লাগলে কিছু লোক খামাখা সেখানে ভিড় জমায়। এতে ফায়ার সার্ভিসের কাজে বিঘœ ঘটে। আবার ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে একটু দেরি হলে তাদের মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। তিনি বলেন, আগুন লাগলেই দেখি অনেকে সেলফি তোলে, দেখতে যায়। সেলফি তোলার কী আনন্দ বুঝি না। তা না করে সবাই এক বালতি করে পানি আনুক, আগুন নেভানোর চেষ্টা করুক। এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। দেশ উন্নত হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ স্বাধীনতার অর্ধশত বার্ষিকীতে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আয়বৈষম্য কমিয়ে এনে উন্নয়নের ছোঁয়া যেন প্রতিটি আনাচে-কানাচে পৌঁছে যায়, আমরা সেই কাজগুলো করে যাচ্ছি। ২০৭১ সালে আমরা হয়তো থাকব না, যারা থাকবে, উন্নত দেশের নাগরিক হিসেবে তারা স্বাধীনতার শতবর্ষ পালন করবে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তার কাছের লোকজন :  আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মামলা আমরা করিনি। এতিমের টাকা খেয়ে পার পেয়ে যেতে পারেননি তিনি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা, সেটা তার পছন্দের লোকদের হাতেই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতনে বাড়িঘরে থাকতে পারেননি নেতা-কর্মীরা। এমনকি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নগদ টাকাসহ অনেক সম্পদ লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। মিথ্যা মামলায় আমাদের জর্জরিত করতে চেয়েছিল, আমাদের দলীয় কার্যক্রমের কোনো সুযোগই ছিল না। কিন্তু আমরা বিএনপির নামে কোনো মিথ্যা মামলা দিচ্ছি না। নৌকার বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রীদের শোকজ করছে আওয়ামী লীগ : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা ও নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়া দলীয় নেতা, এমপি ও মন্ত্রীদের শোকজ নোটিশ পাঠাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল থেকে নোটিশ সংশ্লিষ্টদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে যেসব এমপি-মন্ত্রী ব্যক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে নৌকার বিরোধিতা করেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নৌকা দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বৈঠকে এমন হুশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ    হাসিনা বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে আমি নৌকা দিলাম। অথচ কিছু এমপি-মন্ত্রী ও নেতার তা পছন্দ হয়নি। উপজেলায় যদি নৌকা তাদের পছন্দ না হয়, তাহলে আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন তাদের নৌকা দেব? নৌকা যেহেতু তাদের পছন্দ নয়, সেহেতু নৌকা দেব না। যারা নৌকা নিয়ে হেরেছেন, বা যাদের বিরোধিতা করে হারানো হয়েছে, তাদেরই নৌকা দেব।  আগামী সাত দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ৮টি বিভাগে ঘোষিত ৮টি টিম দ্রুত গঠন করে তৃণমূলে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর সম্মেলন করতেও নির্দেশনা দেন তিনি। এ কমিটি মুজিব বর্ষ উদযাপনেও তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করবে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব নেতা-কর্মীর ডাটাবেজ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচন আগামী দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করলে এ নিয়ে পরে দেখা যাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর