শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

নাটকীয়তার শেষ নেই, অস্থির জাতীয় পার্টি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দল পরিচালনায় ব্যর্থ আর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিভেদ তৈরির অভিযোগ এনে মাত্র ১১ দিন আগে দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে নিজের ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপিকে সরিয়ে দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গত ২২ মার্চ মধ্য রাতে হুট করেই গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে   জিএম কাদেরকে সরিয়ে দেন তিনি। দলের কোনো নেতার সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জানানো হয়। এর মাত্র ১২ দিনের মাথায় একই কায়দায় বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে ‘সাংগঠনিক নির্দেশ’ শিরোনামে আরেকটি বিবৃতি পাঠিয়ে জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করেন হুসেইন          মুহম্মদ এরশাদ। জানা গেছে, দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার মধ্যেই ২২ মার্চ রাতে হঠাৎ করে কো-চেয়ারম্যানের পদ এবং পরদিন ২৩ মার্চ সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে নিজের ছোট ভাই জি এম কাদেরকে সরিয়ে দেন এরশাদ। স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা নিয়োগ করা হয়। আবার ১২ দিনের মাথায় জি এম কাদেরকে কো চেয়ারম্যানের পদে পুনর্বহাল করাসহ এরশাদের সাম্প্রতিক কর্মকা  নিয়ে জাপার মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে এরশাদের প্রতি এক ধরনের আস্থাহীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু দলের চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও বিভিন্ন ঘরোয়া বৈঠকে  জাপার শীর্ষ নেতারা চেয়ারম্যানের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করছেন। কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েও সমালোচনা করছেন। তবে দলের তৃণমূল নেতাদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, পার্টি চেয়ারম্যান অসুস্থ। তার স্বাভাবিক কাজ করারও শক্তি নেই। সম্প্রতি যা ঘটছে তার জন্য দায়ী দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাদের বিশেষ সিন্ডিকেট। তারা ব্যক্তিস্বার্থে এরশাদকে বিতর্কিত করছেন। শুধু দলের নেতা-কর্মীদের কাছে নয়, দেশের মানুষের কাছেও এরশাদকে হাসির পাত্র বানাচ্ছেন। জানা গেছে, জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদে পুুনর্বহাল করার জন্য বৃহত্তর রংপুরের জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা দলের চেয়ারম্যানকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত আলটিমেটাম দেন। এই তারিখের মধ্যে জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানে পদে পুনর্বহাল না করলে তারা গণপদত্যাগের হুমকি দেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ বিদেশে অবস্থানরত জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জি এম কাদেরকে কো চেয়ারম্যানের পদে পুনর্বহালের দাবি জানান। এদিকে ঢাকায় বিশেষ সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য কোনোভাবে যাতে জি এম কাদেরকে কো- চেয়ারম্যানের পদে পুনর্বহাল করা না হয় সেজন্য এরশাদকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এর মধ্যে ৩ এপ্রিল রংপুরের সিটি মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার নেতৃত্বে বৃহত্তর রংপুর বিভাগের শীর্ষ নেতারা  বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে এরশাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এ বৈঠকের পরদিনই আবারও এরশাদ বিশেষ সিন্ডিকেটের চাপ উপেক্ষা করে জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদে পুনর্বহাল করেন। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, এরশাদ সাহেব হচ্ছেন জাতীয় পার্টির অভিভাবক। তিনি যখন যা ভালো মনে করেছেন, তাই করছেন। আমাকে তিনিই পার্টির কো-চেয়ারম্যানের পদে বসিয়েছেন, আবার তিনি সরিয়ে দিয়েছেন, পুনরায় তিনিই আমাকে কো-চেয়ারম্যান করেছেন। আমি আগে যেমন পার্টির দায়িত্ব পালন করেছি, এখনো আমার ওপর দেওয়া দায়িত্ব পালন করব।

সর্বশেষ খবর