শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাসচাপায় থেঁতলে গেল শিক্ষার্থীর মাথা

১০ বাস ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার ডেমরায় বাসচাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছে এক কলেজছাত্র। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। রক্তে ভিজে যায় সেখানকার রাস্তা। মর্মান্তিক এ মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় রামপুরা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল। এ সময় অন্তত ১০টি বাস ভাঙচুর করা হয়। মোবাইলে বিক্ষোভের দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ পথচারী। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ডেমরা আমুলিয়া রোডের মোস্ত মাঝির মোড়ে কলেজছাত্রকে চাপা দেয় রমজান ও স্বাধীন পরিবহনের পর পর আসা দুটি বাস। নিহত ছাত্রের নাম ইরাম (১৭)। সে ডেমরার গোলাম মোস্তফা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। তার বাড়ি আমুলিয়া মেন্দিপাড়ায়। পুলিশের ওয়ারী ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম জানান, ইরামকে রমজান পরিবহনের একটি বাস প্রথমে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। পরে বাসটিসহ চালক শামিম ও হেলপার মুন্না মিয়াকে আটক করে রামপুরা থানা-পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী স্টাফ কোয়ার্টারের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইরাম সাইকেল চালিয়ে আসছিল। এ সময় তাকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে চাপা দেয় রমজান পরিবহনের একটি বাস। ওই বাসের পেছনে ছিল স্বাধীন পরিবহনের একটি বাস, সেটিও তার মাথার ওপর দিয়ে চাপা দিয়ে চলে যায়। রাস্তায় পিষ্ট হয়ে যায় ইরামের মাথা। পরিস্থিতি এতটাই বীভৎস ছিল যে, তার চেহারা চেনার কোনো উপায় ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে এলাকাবাসী বাস দুটিকে ধাওয়া করেন। দ্রুতই বাস নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন চালক। পরে বিক্ষুব্ধরা মোস্ত মাঝি মোড়ে গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারে তিন রাস্তায় তিনটি টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় ডেমরা-সারুলিয়া সড়কে, আমুলিয়া মডেল টাউনের সামনের দিকে পার্কিং করে থাকা অছিম, আসমানি ও নতুনভাবে রঙ করা সুপ্রভাত পরিবহনের অন্তত ১০টি বাসে তারা ভাঙচুর চালান। টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে এবং লাঠিসোঁটা হাতে বিক্ষোভকালে যারা মোবাইলে দৃশ্য ধারণ করছিল তাদের ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা করা হয়। সড়ক অবরোধের ঘটনায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ পথচারীরা। বাধ্য হয়ে তারা হেঁটে, কিছু পথ রিকশা ও ভ্যানে চলাচল করেন। এ অবস্থায় যাত্রীদের অনেকটা জিম্মিদশায় ফেলে গলাকাটা ভাড়া আদায় করেন রিকশা, ভ্যানসহ সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালকরা। পথচারীদের কেউ কেউ ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়ায় প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক আমুলিয়া মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে নামেন। সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ২০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় ১ কিলোমিটার সড়কের দূরত্ব নন্দীপাড়া ব্রিজের ঢালে নামেন। তবে ডেমরার দিকে চলাচল করা বাসগুলো এখানেই থেমে ছিল। পুলিশের ডেমরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে যায়।

বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রাণ হারাল দুই শিক্ষার্থী : রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে প্রাণ হারাল দুই শিক্ষার্থী। গতকাল বেলা ৩টার দিকে ফ্লাইওভারের বাসাবো ঢালে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া দুজন হলেনÑ আবদুল্লাহ আল নোমান (১৭) ও তার বন্ধু তাজউদ্দিন হোসেন তুহিন (১৮)। নোমান ঢাকা ইস্টার্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির এবং তুহিন কদমতলী পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়। জানা গেছে, নোমানের বাবা মোহাম্মদ শেখ আহমেদ মজিদ। তারা সবুজবাগ ৩৮০ ওহাব কলোনিতে থাকে। আর তুহিনের বাবা তোফাজ্জল হোসেন। বাসা সবুজবাগ ৪০১ ওহাব কলোনিতে।

ঢামেক সূত্র জানায়, বেলা ৩টার দিকে খিলগাঁও ফ্লাইওভারে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিল নোমান। নোমানের পেছনে বসা ছিল তুহিন। নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে বাসাবো ঢালে ছিটকে পড়ে তারা। আইল্যান্ডের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে গুরুতর আহত হয় দুজনই। পথচারীরা গুরুতর আহতাবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ খবর