মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

অনেককে বাঁচানো সোহেল চলে গেলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনেককে বাঁচানো সোহেল চলে গেলেন

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। সেদিন অনেকের জীবন বাঁচাতে পারলেও তিনি নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহেল রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল রাত পৌনে ১১টায় তার লাশ বহন করা ফ্লাইট ঢাকায় এসে অবতরণ করে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএইচে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে জানাজা হবে। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনায়। ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকাজে যোগ দেন সোহেল। ফায়ার সার্ভিসের উঁচু ল্যাডারে (মই) উঠে টাওয়ারের আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজ করছিলেন তিনি। একপর্যায়ে তার শরীরে লাগানো নিরাপত্তা হুকটি মইয়ের সঙ্গে আটকে যায়। তিনি মই থেকে পিছলে পড়ে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিলেন। সেখানে আঘাতে তার একটি পা ভেঙে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দেশে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সিএমএইচের চিকিৎসকদের পরামর্শে শুক্রবার সোহেলকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। তার দেখাশোনা করার জন্য ফতুল্লা ফায়ারস্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার রায়হানুল আশরাফকেও তার সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল। এফআর টাওয়ারে আগুনের ওই ঘটনায় সোহেল রানা ছাড়া আরও পাঁচজন উদ্ধারকর্মী আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সোহেলকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছিল। কুর্মিটোলা ফায়ারস্টেশনের ফায়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন সোহেল। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের কেরুয়ালা গ্রামে। পরিবারের বড় ছেলে সোহেল রানা ২০১৫ সালে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে যোগ দেন। এদিকে সোহেলের মৃত্যুর খবরে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সকাল থেকেই কেরুয়ালা গ্রামে সোহেলের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী ভিড় জমান। সর্বশেষ ২৩ মার্চ সোহেল ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় মাকে জানিয়েছিলেন, ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে শিগগিরই বাড়িতে আসবেন। এর আগেই চিরদিনের জন্য ছুটি নিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন সোহেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেল রানার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

 প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘অন্যের জীবন রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে সোহেল রানা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

এদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেল রানার মৃত্যুতে আজ রাজধানীর আরমানিটোলা মাঠে অগ্নিকান্ডের মহড়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে এবং এ বিষয়ে সচেতন করতে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীসহ পুরান ঢাকাবাসীর অংশগ্রহণে আজ আরমানিটোলা মাঠে ফায়ার সার্ভিসের মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়া কথা ছিল। রবিবার এক মতবিনিময় সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এ মহড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফায়ার ফাইটার সোহেল রানার মৃত্যুতে এ কার্যক্রম স্থগিত করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।

সর্বশেষ খবর