মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের বিকল্প নেই

রুহুল আমিন রাসেল

শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের বিকল্প নেই

ড. রুবানা হক

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নির্বাচনে বিপুল ভোটে পূর্ণ জয় পেলেও, তাতে নিজের কোনো অনুভূতি নেই বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রুবানা হক। তার মতে, পোশাকশিল্পের ক্রেতাদের চাহিদা বদলে গেছে। তিনি প্রেসক্রিপশনের বিপক্ষে। এ প্রসঙ্গে ড. রুবানা হক বলেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে চাই। আগামীতে শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে চাপের প্রয়োজন নেই, বরং দক্ষতাই জরুরি। শিল্পের উন্নয়নে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কেরও বিকল্প নেই। কারণ, শ্রমিকরাই আমার বড় হাতিয়ার। আমি সেতুবন্ধের কাজটা ঠিকভাবে করতে চাই। গতকাল রাজধানীর খিলক্ষেতে লোটাস কামাল টাওয়ারে মোহাম্মদী গ্রুপের কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. রুবানা হক। তিনি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে নিজের ‘সম্মিলিত-ফোরাম’ প্যানেলের পূর্ণ জয় পাওয়ায় আগামী ২০১৯-২১ মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে তিনি হতে যাচ্ছেন বিজিএমইএর প্রথম নারী সভাপতি। রুবানা হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন- ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী। আনিসুল হকও ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি পরবর্তীতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সার্ক চেম্বারেরও সভাপতি ছিলেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জরিপে শত নারী উদ্যোক্তার তালিকায় স্থান পাওয়া রুবনা হকের কবি হিসেবেও খ্যাতি আছে। তার ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘টাইম অব মাই লাইফ’-এর জন্য ২০০৬ সালে পেয়েছেন সার্ক সাহিত্য পুরস্কার। শৈশব থেকেই শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে জড়িত রুবানা হক দেশসেরা বিতার্কিকও ছিলেন। দেশের অন্যতম পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী গ্রুপের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, গণমাধ্যম ও জ্বালানি খাতের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ড. রুবানা হক বলেন, দিন শেষে কারখানা বন্ধের সমঝোতা করে সময় শেষ করতে চাই না। আমার কাজ হবে ভিশন ঠিক করা। বিজিএমইএকে করপোরেট পদ্ধতিতে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এখন পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। আমি নিজেকে সেতু মনে করি। তাই সেতুবন্ধের কাজটা করতে চাই। এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। ইশতেহারে আমাদের ৭টি অগ্রাধিকার আছে। সেগুলো এগিয়ে নেব। এর বাইরে যাব না। এগুলোর দৃশ্যমান বাস্তবায়ন করতে চাই। শ্রমিকদের সাফল্যের গল্প শোনাতে চাই। যতটুকু আমাদের অবিশ্বাসের জায়গা আছে, সেটা শক্তভাবে ধরব। শ্রমিকদের মজুরিসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে মজুরি হবে দক্ষতা অনুযায়ী। আমরা কেন কেবল পরিস্থিতির কথা বলি। মজুরি বাড়ানোর জন্য চাপের দরকার নেই। তাদের দক্ষতা জরুরি। দক্ষতা বাড়লে কেউ এখন যে মজুরি পান, তার চেয়ে বেশিও পেতে পারেন। এত দিন অ্যাডহক ভিত্তিতে মজুরি বেড়েছে। প্রতি বছরই ৫ শতাংশ মজুরি বাড়ানো হচ্ছে। এটা তো দক্ষতার ভিত্তিতে নয়, কেউ বেশিও পেতে পারেন। এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ রাখতে চাই না। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে বন্ধু ভাবতে চাই। তার মতে, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের কোনো বিকল্প নেই। সম্পর্কের অভাবে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন, সাধারণ শ্রমিক, শ্রমিক নেতৃত্ব ও মালিকদের সম্পর্ক উন্নয়ন করব। শ্রমিকরা আমার বড় হাতিয়ার। মালিকদের দক্ষতা ও ত্রুটি কীভাবে শোধরাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রুবানা হক বলেন, কিছু ত্রুটি হয়তো সবারই আছে। মালিকরা সবাই এখন অনেক কষ্ট করছেন। ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেকে লজ্জায় বলতে পারেন না। দু-তিন কোটি টাকাও নেই অনেক মালিকের, তারা বেতন দিতে পারছেন না। ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একটা নীতিমালা লাগবে। যে ব্যবসা করতে পারছে না, তাকে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিতে হবে। ড. রুবানা হক বলেন, তৈরি পোশাকপণ্যের ক্রেতাদের পছন্দ বদলে গেছে। ছোট কারখানাগুলোকে অসম প্রতিযোগিতা থেকে বের করতে একত্রীকরণ করতে হবে। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমার টার্গেট, সাড়ে ৪ হাজার কারখানার একটাও বন্ধ হবে না। দুই বছরে অনেক কিছু বদলে দেওয়া যায়। যেটা আনিসুল হক সিটি করপোরেশনে দেখিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বিজিএমইএতে কাজ করা অনেক সহজ। দেশ-বিদেশে আমাদের পোশাকশিল্পের আত্মমর্যাদার ঘটাতি পূরণে আমি প্রেসক্রিপশনের বিপক্ষে। তিনি মনে করেন, পোশাকশিল্পের জন্য অবকাঠামো সমস্যা বড় চ্যালেঞ্জ। সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরের দক্ষতা ও সেবার মান উন্নয়ন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর