বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

উন্নয়নে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নয়নে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার গবেষণায় জোর দিয়েছে বলেই দেশ আজ খাদ্য থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে। তিনি বলেন, ২৯ বছর স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় থাকলেও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে গবেষণার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করেনি। এমনকি গবেষণার কথা কারও মাথায়ই ঢোকেনি। যে কারণে যথাযথ উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ ও গবেষক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি প্রথমবার সরকারে এসেই লক্ষ্য করলাম, আমাদের দেশে গবেষণার জন্য কোনো বরাদ্দ দেওয়া হতো না। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সচরাচর নিয়মিত শিক্ষার ক্ষেত্রে যতটুকু গবেষণা করা দরকার, সেটুকুই করত। এর জন্য যে বিশেষভাবে প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন এবং গবেষণার জন্য যে আলাদা একটা বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন, সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া প্রয়োজন, এ কথাটাই তাদের মাথায় কখনো ঢোকেনি। তিনি বলেন, আমি প্রথমেই একটা থোক বরাদ্দ সুনির্দিষ্ট করে দিলাম। কারণ যখন সরকার গঠন করেছিলাম তখন এশিয়ায় অর্থনৈতিক মন্দাও ছিল। আমাদের রিজার্ভ মানিও কম ছিল, মাথাপিছু আয় কম ছিল। তারপরও আমার মনে আছে, প্রথমে আমি ১২ কোটি টাকা শুধু গবেষণার জন্য বরাদ্দ রাখলাম। পরের বছর যখন বাজেট করলাম তখন আমরা ১০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ গবেষণা এবং তথ্যপ্রযুক্তির জন্য আলাদাভাবে রেখে দিলাম। তখন থেকে যে আমরা গবেষণা শুরু করলাম, তার ফলে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে গবেষকদের আরও ভালো করে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। অর্থনৈতিকভাবে এখন আমরা স্বাবলম্বিতা অর্জন করছি। আমি মনে করি এখানে যারা গবেষক আছেন আরও ভালো করে গবেষণা করুন। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে গবেষণাই হচ্ছে একমাত্র পথ। গবেষণার মধ্য দিয়েই সমাজকে আমরা গড়ে তুলতে পারি। আল্লাহর রহমতে এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশ। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশে আরও বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ এবং গবেষক তৈরি হোক সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অন সাইন্স অ্যান্ড আইসিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়িত করছি। তিনি বলেন, এদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭৩ সালে এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথ ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে একটি প্রযুক্তিনির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ গড়তে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ছিল তখন সব স্কলারশিপ বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেকে আধাআধি পড়ার পরই দেশে ফিরে এলেন, আবার অনেকে অনেক কষ্ট করে বিদেশের মাটিতে থেকে তাদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করলেন, কিন্তু তাদের চাকরি ছেড়ে দিতে হলো।  শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, বাংলাদেশের জনগণ যেন উন্নত জীবন পায় এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই দীর্ষমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। শতবর্ষ পর আমাদের যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে তাদের জীবনযাত্রার মান কেমন হবে সেটা মাথায় রেখেই আমাদের এই পরিকল্পনা। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমি মনে করি আমাদের বিজ্ঞানী, গবেষক- তাদের একটা বিরাট দায়িত্ব জাতির কাছে আছে। কাজেই সেই দায়িত্বটা আপনারা পালন করবেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আ ফ ম রুহুল হক, মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন।  প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং গবেষকদের মাঝে গবেষণা অনুদানের চেক বিতরণ করেন।

সর্বশেষ খবর