বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

শেষ মুহূর্তে যত হিসাব-নিকাশ

মোদি রাহুল মমতা হতে পারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ভারতে প্রথম ধাপে ৯১ আসনে ভোটযুদ্ধ আজ

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি ও দীপক দেবনাথ, কলকাতা

শেষ মুহূর্তে যত হিসাব-নিকাশ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসছেন, নাকি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ঘটছে পুনরুত্থান- এই জল্পনার মধ্যে আজ শুরু হচ্ছে ভারতের সপ্তদশ লোকসভা (সংসদ) নির্বাচন। ১ হাজার ৮৪১টি নিবন্ধিত দল এতে অংশ নিচ্ছে। প্রথম দফার নির্বাচনে প্রার্থী প্রায় ১৩০০। লোকসভার ৫৪৩ আসনের জন্য নির্বাচন হবে ৭ পর্বে। আজ প্রথম ধাপে ৯১টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।  নির্বাচন শেষ হবে ১৯ মে। ভোট গণনা ২৩ মে। চলতি লোকসভার মেয়াদ শেষ হবে ৩ জুন। তার আগেই নতুন সরকার গঠন করতে হবে। আজ লোকসভা ভোটের সঙ্গে ৪টি রাজ্যের বিধানসভার ভোট গ্রহণও চলবে একসঙ্গে। রাজ্য ৪টি হলো-অন্ধ্র, অরুণাচল, সিকিম ও উড়িষ্যা।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই : জনমত সমীক্ষা যেভাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছে তাতে লোকসভা ত্রিশঙ্কু হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাহলে কি মমতার মতো কোনো আঞ্চলিক দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী হবেন?

ভারতের বেশির ভাগ জনমত সমীক্ষা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সকে (এনডিএ) এগিয়ে রাখলেও লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা গেছে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বাদে যে প্রধানমন্ত্রী নিরঙ্কুুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন তিনি দ্বিতীয়বার জয়ী হননি। ইন্দিরা গান্ধী নিরঙ্কুুশ ক্ষমতা পেলেও ১৯৭৭ সালে মোরারজী দেশাইয়ের নেতৃত্বে জনতা দলের হাতে পরাজিত হন। সেই মোরারজী দেশাইও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেয়েছিলেন। কিন্তু আড়াই বছরের মধ্যে ফের ভোট হয়। সেই মোরারজী দেশাই ফের ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর অকালমৃত্যু ঘটে আততায়ীর হাতে। তারপর রাজীব গান্ধী রেকর্ডসংখ্যক আসন পেয়ে জয়ী হন। কিন্তু পাঁচ বছর পর তিনিও পরাজিত হন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর কাছে। শুরু হলো কোয়ালিশন সরকার। সেই কোয়ালিশন যুগ চলল ২০১৪ সাল সর্বশেষ লোকসভা ভোট পর্যন্ত। নরেন্দ্র মোদি দুই দশক পর নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন। তাই এবার মোদি সেই পরম্পরা উপেক্ষা করে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরেন কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। লোকসভা ভোটের সঙ্গে ভারতের চার রাজ্যের বিধানসভা ভোট হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল, সিকিম এবং উড়িষ্যায়। আজই হবে ভোট।

লোকসভা নির্বাচন ২০টি রাজ্যে আজ ভোট : আজ প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গ, অরুণাচল, ত্রিপুরা, আসাম, বিহার, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানাসহ দেশের ২০ রাজ্যে লোকসভার ৯১টি আসনে ভোট। সকাল ৭টায় শুরু হবে ভোট, চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আজ পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার-এই দুটি আসনে ভোট। দুটি আসনে মোট ১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ : এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৯০ কোটির মতো। অর্থাৎ দেশটির মোট জনসংখ্যার (১৩০ কোটি) ৬৯.২৩ শতাংশ এবার ভোটদানের অধিকারী হবেন। যেটা সমগ্র ইউরোপ ও ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান। গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ছিল ৮৩ কোটি। এবারে নতুন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১.৬০ কোটি। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৩৮,৩২৫ জন। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। দেশজুড়ে ভোট কেন্দ্র রয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৩৫ হাজার। ভোট নেওয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যন্ত্রে। ভোটকে কেন্দ্র করে ভুয়া খবর, গুজব, অশ্লীল ভাষা ছড়িয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরও কড়া নজরদারি চলছে। ২০১৪ সালের মতো এবারের নির্বাচনেও কোনো প্রার্থীকে পছন্দ না হলে ‘নোটা’ দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে ভোটারদের।

নির্বাচনী খরচ : স্বাধীন ভারতে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫২ সালে, সেবার নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ১০ কোটি ৪৫ লাখ রুপি। শেষবার ২০১৪ সালে সেই খরচ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮৭০ কোটি রুপিতে। এবারও দিল্লিভিত্তিক ‘সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ’র তথ্যানুযায়ী এবারের নির্বাচনে খরচের সংখ্যা ৫০০ বিলিয়ন রুপি ছাড়াতে পারে। সপ্তদশ নির্বাচনে যে ইস্যুগুলো প্রাধান্য পেতে চলেছে তা হলো- বেকারত্ব, কর্মসংস্থান, নোট বাতিল, জাতপাতের সমস্যা, রাফায়েল যুদ্ধবিমান ক্রয়ে কেলেঙ্কারির অভিযোগ। প্রভাব ফেলতে পারে কাশ্মীর-পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা এবং বিমানবাহিনীর এয়ার স্ট্রাইকের মতো বিষয়গুলোও। দরিদ্রতাও এবারের নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হতে চলেছে।

আমেথি আসনে রাহুলের মনোনয়নপত্র : উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আমেথি আসনে প্রার্থী হিসেবে গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। দুপুরে জেলা কালেক্টরের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন মা ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী, বোন তথা দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, স্বামী রবার্ট ভদ্র। এর আগে হুড খোলা গাড়িতে করে রোড শো করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান রাহুল। সেখানেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, রবার্ট ভদ্র ছাড়াও তাদের দুই সন্তান- ছেলে রায়হান ও কন্যা মিরায়া এবং কংগ্রেসের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাহুলের রোড শো ঘিরে এদিন মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। রাস্তার দুই ধার থেকে কংগ্রেস সভাপতিকে ফুল-মালা দিয়ে স্বাগত জানান আমেথির দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। ঢাকঢোল-ড্রাম নিয়েও নাচতে দেখা যায় তাদের। রাহুলের গোটা পরিবারকে কাছে পেয়ে সেলফি, ছবিও মোবাইলবন্দী করলেন কর্মী-সমর্থকরা।

রোড শো থেকেই সমর্থকরা স্লোগান দিতে থাকেন ‘আবকি বার, ৫ লাখ পার’। আসন্ন লোকসভা ভোটে আমেথি ছাড়াও কেরালার ‘ওয়ানাড়’ কেন্দ্র থেকেও এবার কংগ্রসের টিকিটে লড়াই করছেন ৪৮ বছর বয়স্ক রাহুল। আমেথি বরাবরই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। এই কেন্দ্র থেকেই তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছেন রাহুল। ২০১৪ সালে আমেথি কেন্দ্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। যদিও খুব কম ভোটে রাহুলের কাছে হেরে যান স্মৃতি। এবারও এই কেন্দ্রে রাহুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্মৃতি। আগামী ২৩ এপ্রিল ওয়ানাড়ে লোকসভার ভোট, অন্যদিকে আমেথিতে নির্বাচন আগামী ৬ মে।

সর্বশেষ খবর