বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাগজের ভ্যাট নিম্নতম স্তরে দেখতে চান উৎপাদকরা

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার কঠোর হাতে দমন করা হবে : এনবিআর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে কাগজের মূল্য সংযোজন কর-মূসক বা ভ্যাট নিম্নতম স্তরে (স্লাব) দেখতে চান দেশীয় কাগজ উৎপাদকরা। তাদের সংগঠন বিপিএমএ বলেছে, বন্ডসুবিধার অপব্যবহারের কারণে দেশীয় কাগজশিল্প  দুর্ভোগ পোহাতে পোহাতে এখন রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। আর বিএইচপিএমএ বলেছে, দেশীয় শিল্প রক্ষায় আমদানি হওয়া বেবি ডায়াপার প্রতি পিস বা প্যাকেট হিসেবে শুল্কায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হোক। একই সঙ্গে বেবি ডায়াপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন বা সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনের কাঁচামালের আমদানি পর্যায়ের সম্পূরক শুল্ক বা সিডি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হোক। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএমএ ও বাংলাদেশ হাইজিন প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচপিএমএ) নেতারা। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সংস্থাটির সদস্য ফিরোজ শাহ আলম, বিপিএমএর সহসভাপতি মোহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশ হাইজিন প্রোডাক্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও বসুন্ধরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআইর পরিচালক খোন্দকার রুহুল আমিন, আবু নাসের খান প্রমুখ। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে নামিয়ে সোজা কালোবাজারে বন্ডসুবিধার আমদানি পণ্য বিক্রি করছেন। বন্ডসুবিধার এই অপব্যবহার কঠোর হাতে দমন করা হবে। আর ট্যারিফ ভ্যালুর অন্য্যান্য খাতে সর্বনিম্ন ভ্যালুর সঙ্গে রাখা হবে কাগজশিল্পকে। একই সঙ্গে প্লাব আমদানিতে শুল্ক ঢেলে সাজানো হবে। এ শিল্প রক্ষায় এনবিআর গুরুত্ব দেবে। এর আগে বিপিএমএর সহসভাপতি মোহাম্মদ ইউনূস বলেন, কাগজশিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ খাত। দেশে ১০৬টি পেপার মিল রয়েছে। দেশীয় চাহিদা পুরোপুরি মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করে ৩০টির অধিক দেশে রপ্তানি হচ্ছে কাগজ। অথচ দেশে বন্ডেডওয়্যার হাউসের সুবিধার অপব্যবহার করে বিনা শুল্কে আমদানি হওয়া কাগজ খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পন্থায় কাগজ আমদানির ফলে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে দেশীয় কাগজশিল্প। শোচনীয় অবস্থায় নিপতিত হয়ে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে এ শিল্প খাত। উদ্যোক্তাদের বিশাল বিনিয়োগ ছাড়াও বিরাট অঙ্কের ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও এক অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিএইচপিএমএর আহ্বায়ক ও বসুন্ধরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেকে ব্রাউন কালারের কাগজ আমদানি করে সাদা কাগজের ঘোষণা দিচ্ছেন। কাগজের বাণিজ্যিক আমদানি নেই। কিন্তু বন্ডের কাগজে বাজার সয়লাব হয়ে আছে। তিনি চার কোটি শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনায় রেখে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশে উৎপাদিত এক্সারসাইজ বুক খাতার ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার দাবি করেন। হাইজিন প্রোডাক্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুসংখ্যক অসাধু আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পিস বা প্যাকেটের পরিবর্তে কেজিপ্রতি শুল্কায়ন করে বেবি ডায়াপার নিয়ে এসে তা প্যাকেটজাত করে পিস বা প্যাকেট হিসেবে বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করছেন। ফলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিপণন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পেরে লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমদানি করা বেবি ডায়াপারের ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্বক কেজিপ্রতি শুল্কের পরিবর্তে পিস বা প্যাকেটপ্রতি শুল্কায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি বেবি ডায়াপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন বা সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল বা কেমিক্যালসের ওপর আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক বা সিডি ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে হ্রাস করার প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশ হাইজিন প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাজেট প্রস্তাবে বলেছে, সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে বসুন্ধরা গ্রুপ, স্কয়ার, এসিআই, এসএমসি, প্রাণ, ইনসেপ্টা, আকিজ, এবি গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সুবৃহৎ আধুনিক পরিবেশবান্ধব হাইজেনিক শিল্প কারখানা স্থাপন করেছে। বর্তমানে বেবি ডায়াপার ও স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাহিদার তুলনায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বেবি ডায়াপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিদেশ থেকে বেবি ডায়াপার আমদানি না করেও দেশের উৎপাদিত বেবি ডায়াপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএমএ আমদানি-বিকল্প দেশীয় কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পগুলো রক্ষায় দেওয়া বাজেট প্রস্তাবে বলেছে, সাদা ছাপা-লেখার কাগজ ও কোটেড পেপার ট্যারিফ পণ্যের আওতাভুক্ত, তাই আমদানিকালে পরিশোধিত ভ্যাট রেয়াত নেওয়ার সুযোগ নেই। এ কেমিক্যালস্ দিয়ে প্রস্তুতকৃত উন্নতমানের কাগজ দেশের শিক্ষার্থীদের একটি প্রধান উপকরণ। ফলে শিক্ষা উপকরণের মূল্য হ্রাস পাবে। এ ছাড়া এ উন্নতমানের কাগজ তৈরি হওয়ায় আমদানি-নির্ভরতা কমছে এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। তাই এ কাগজ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য এবং সর্বোপরি শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যয় হ্রাসকল্পে আমদানিকৃত কেমিক্যালসের ওপর থেকে আমদানি পর্যায়ে সিডি ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা হোক। বিপিএমএ বলেছে, সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার সরকারের মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা উপকরণের মূল্য হ্রাস করা প্রয়োজন। পাশের দেশসমূহে শিক্ষা বিস্তার নিশ্চিত করার জন্য সকল প্রকার শিক্ষা উপকরণ ভ্যাটের আওতাবহির্ভূত। তাই শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশে উৎপাদিত এক্সারসাইজ বুকের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হোক।

সর্বশেষ খবর