বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশে চলছে রাজনৈতিক বৈষম্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে চলছে রাজনৈতিক বৈষম্য

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন,  এখন দেশে যে বৈষম্য চলছে, তা রাজনৈতিক বৈষম্য। যে দেশে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র নাই- সে দেশে রাজনৈতিক গণতন্ত্র তেমনই হয়। আর অর্থনীতির বৈষ্যমের কারণে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও সে লেভেলে চলে যাবে, যেখানে প্রতি বছর সালাম দিয়ে আপনাদের বলতে হবে, খুব কষ্টে আছি কিছু দিয়ে যান।  তিনি শ্রমিক শ্রেণির উদ্দেশে বলেন, এখন বাজেটের সময় দাবি করছেন, এটা করেন, ওটা করেন। কিন্তু এখন শ্রমিকদের শক্তি কত, যে এসব দাবি করতে পারেন। শ্রমিকদের শক্তিশালী অবস্থান কোথায় যে সরকার আপনাদের কথা শুনবে? জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গতকাল ‘আসন্ন বাজেট : শ্রমিক কর্মচারী ও জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ। আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান,  বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ প্রমুখ। অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল, দেশ স্বাধীন হলে বৈষম্য থাকবে না। বঙ্গবন্ধু  বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের মতো পরিবার বা গোষ্ঠী কেন্দ্রিক ধনিক গোষ্ঠী সৃষ্টি করতে চাননি। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, উন্নয়নের জন্য আমাদের ৮-১০-১২ শতাংশ গ্রোথে যেতে হবে, ঠিক আছে। কিন্তু সমাজের শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে অসম্ভব বৈষম্য হয়ে গেছে। সমাজে এ রকম বৈষম্য বজায় থাকলে সেটা স্বাধীনতার চেতনা হবে না, বঙ্গবন্ধুর চেতনা হবে না। প্রসঙ্গক্রমে  তিনি বলেন, এখন বিজেএমইএ’র নেতারা মন্ত্রী হচ্ছেন। রাজনীতির অংশ হয়ে যাচ্ছেন।

এখন শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করবে কে? এটা বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘোড়াশাল ও আদমজীর শ্রমিক সমাবেশে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণি ছিল। তিনি বলতেন, দেশ স্বাধীন হলে এমন একটা ব্যবস্থা করব, যেখানে কারখানার মালিকানায় শ্রমিকদেরও অংশীদারিত্ব থাকবে। কিন্তু শ্রমিকদের মধ্যে বিভক্তির কারণে সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শ্রমিকদের ঐক্যের যে সমস্যা তখন ছিল, তা এখনো আছে। একেক জায়গায় পঞ্চাশটি ট্রেড ইউনিয়ন। ফলে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন দুর্বল হয়ে গেছে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে অর্থনৈতিক গ্রাফের ওপরের যে পাঁচজন আছেন, তাদের সঙ্গে সমাজের সর্বনিম্ন পাঁচজনের বৈষম্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ২০১০ সালে ওপরের পাঁচজনের সঙ্গে নিচের পাঁচজনের বৈষম্য ছিল ৩২ গুণ, কিন্তু ২০১৮ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২১ গুণ। মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, করপোরেট কর কমানোর মাধ্যমে অতিধনীদের আয় ও মুনাফা ভারি করা হচ্ছে। ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যাংকিং কমিশন গঠন হচ্ছে না। টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে, বাজেটে তা ঠেকানোর ব্যবস্থা নেই। প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু সুষম বণ্টন হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর