শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

নুসরাতের জন্য কাঁদছে সবাই, জানাজায় ঢল

ফেনী প্রতিনিধি

নুসরাতের জন্য কাঁদছে সবাই, জানাজায় ঢল

নুসরাতের কফিন। বিচার দাবিতে গতকাল ঢাকায় বিক্ষোভ-মানববন্ধন হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাদ্রাসাশিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির মরদেহ গতকাল সন্ধ্যায় তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়ায় এসে পৌঁছায়। এ সময় এলাকার হাজার হাজার মানুষের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। স্বজনসহ এলাকাবাসী  নুসরাতের এই অপমৃত্যুর ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা এই বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। নুসরাতের লাশ স্বজনদের দেখানোর পর জনতার ভিড় ঠেলে ধীরে ধীরে লাশের অ্যাম্বুলেন্সটি নির্ধারিত জানাজার স্থান সোনাগাজীর মো. সাবের পাইলট হাই স্কুল মাঠে প্রবেশ করে। জানাজায় ইমামতি করেন নুসরাতের বাবা মাওলানা এস এম মুসা। জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। জানাজায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম, ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার প্রমুখ। জানাজা শেষে খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসার কবরস্থানে দাদির কবরের পাশে নুসরাতের লাশ দাফন করা হয়। এদিকে

নুসরাতের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার নথি গতকাল পিবিআইতে হস্তান্তর  করেছেন সোনাগাজী থানার ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত)। অন্যদিকে নুসরাতের মামলার আসামিদের আইনি সহায়তা দেওয়ায় ফেনী সদর থানার কাজিরবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী বুলবুল সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নুসরাত হত্যা মামলায় গতকাল আসামি যুবায়ের ও পপিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিনের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে এই মামলায় নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। নুসরাতের মৃত্যুর ঘটনায় সোনাগাজীর সর্বস্তরের মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করেছে।

জেলা প্রশাসন থেকে করা তদন্ত কমিটির তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তদন্ত কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ কার্যদিবস সময় বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পি কে এম এনামুল করিম। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্্ দৌলা নারী কেলেঙ্কারি, ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অপকর্ম বছরের পর বছর চালিয়ে এলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সচেতন মহলসহ এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে মাদ্রাসাটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পি কে এম এনামুল করিম বলেন, ‘আমার আমলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে এডিএম আক্তারুন নেছা শিউলি মাদ্রাসাটির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় একটি মেয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দিয়েছিল। পরে মেয়েটির বাবাকে ডাকা হলে মেয়েটির বাবা ও মেয়েটি ঘটনা অস্বীকার করেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এলে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির কাছে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’

সর্বশেষ খবর