শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
অনিয়মের তাৎক্ষণিক তথ্য দেননি

নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের ওপর ক্ষুব্ধ ইসি

গোলাম রাব্বানী

উপজেলা নির্বাচনে নিয়োজিত নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। সদ্য সমাপ্ত চার ধাপের এই নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারা ও নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগের রাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের ভোট দেখভালের দায়িত্ব ছিল। এক্ষেত্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে ভোটের অনিয়মের তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দেননি। এমনকি ভোটের আগের রাতে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও ব্যালটসহ নির্বাচনী মালামাল ঠিকঠাক আছে কিনা- তাও দেখার কথা ছিল। কিন্তু কর্মকর্তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ইসির আনুষ্ঠানিক বৈঠকে  জবাবদিহি করতে হয়েছে। এদিকে ভোটের আগের রাতে ব্যাপক সিল মারার ঘটনা মিডিয়ায় আসায় নির্বাচন কমিশন দুটি উপজেলায় পুরো ভোট বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া ভোটের দিনও অনিয়মের কারণে ৬২ কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে ইসি। অন্যদিকে চার ধাপের উপজেলা ভোটে  ভোট কেন্দ্রে ভোটার না থাকলেও বেশকিছু উপজেলায় অস্বাভাবিক ভোটও পড়েছে। এজন্য উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতেও কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। সেই সঙ্গে আগামী ৫ মে অনুষ্ঠেয় ময়মনসিংহ সিটি ভোটে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইসি কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত ১০ এপ্রিল ইসির আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব বিষয় বিশদ আলোচনা হয়।

ক্ষুব্ধ ইসি; কর্মকর্তাদেরও নানা অভিযোগ : উপজেলা নির্বাচনে নানা অনিয়মের বিষয়ে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক তথ্য না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ইসি। আগামী নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের তথ্য নির্ভয়ে তাৎক্ষণিক ইসিকে জানাতে বলা হয়েছে কর্মকর্তাদের। অনিয়মের তথ্য জানালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেও অভয় দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে ইসির কর্মকর্তারা ভোটের মাঠের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। নির্বাচন কমিশনকে তারা জানান, ইসির কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেও হলেও তাদের পর্যাপ্ত গাড়ি সরবরাহসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। এ ছাড়া ভোটের মাঠের কিছু সমস্যাও তুলে ধরেন তারা। কয়েকজন কর্মকর্তা বৈঠকে বলেন, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের উপস্থিতি থাকলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যায়। এতে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হয়। বৈঠকের এক পর্যায়ে ইসি সচিব বলেন, অনেক উপজেলায় ভোট গ্রহণে অনিয়ম, কেন্দ্র দখলের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা পেয়েছি। ওই তথ্য রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক আমাদের জানাননি। এমনকি আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষকরাও জানাননি। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়ার পর যখন আমরা ফোন করি তখন আমাদের এসব তথ্য দেওয়া হয়। তাহলে আপনাদের পাঠিয়ে লাভ কী! বৈঠকে সচিব আরও বলেন, কথা উঠেছে উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম। ৩০ শতাংশ, ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি যদিও ভোটার উপস্থিত করা আমাদের দায়িত্ব নয়। তবুও আগামী নির্বাচনগুলোয় আমাদের ভালো কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেব। আপনারা ভোটের পরিস্থিতি যাতে ভালো থাকে সেই পদক্ষেপ নেবেন, ভোটার এডুকেশন দেবেন। ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে পর্যবেক্ষক পাঠানোর কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন- উপজেলা নির্বাচনে ২-৩টি ইউনিয়নের জন্য একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে গাড়ি দেওয়া হয়নি। ২-৩ জন পর্যবেক্ষক একই সঙ্গে এক গাড়িতে ঘুরতে হয়। এ কারণে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষকণ করা যায়নি। এর জবাবে কমিশন থেকে বলা হয়েছে, সামনের নির্বাচনগুলোতে গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর