রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঢাবিতে ছাত্রলীগের কোন্দল আগুনে পুড়ল বৈশাখী আয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতাদের বিরোধের জেরে পণ্ড হয়ে গেছে পয়লা বৈশাখের আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও ডাকসু যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে ওই অনুষ্ঠানস্থলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি গ্রুপ। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে না জানিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করায় হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল চৈত্রসংক্রান্তি ও আজ পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে কনসার্টের আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এজন্য স্টল, মঞ্চ তৈরিসহ সবরকম প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়। জেমস, মিলা, ওয়ারফেজ, আর্টসেল, ফিড ব্যাকসহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের পরিবেশনায় কনসার্টের আয়োজন ছিল। অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল কোমল পানীয়ের প্রতিষ্ঠান ‘মোজো’। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর শুক্রবার দিবাগত রাতে কে বা কারা অনুষ্ঠানের মঞ্চ, স্টল এবং বিভিন্ন উপকরণে আগুন ধরিয়ে দেয় ও ভাঙচুর করে। মল চত্বরের সীমানাপ্রাচীর ও আশপাশে লাগানো কনসার্টের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। রাতের ওই ঘটনার পর নেতা-কর্মী নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখার জন্য আয়োজনের দায়িত্বে থাকা মোজোর মার্কেটিং বিভাগের অপারেশন হেড (ব্র্যান্ড) আজম বিন তারেককে অনুরোধ করেন। কিন্তু সকালে অনুষ্ঠানস্থলে আরেক দফা হামলা হয়। আজম বিন তারেক জানান, ‘রাতে হামলার পর নেতাদের অনুরোধে আবারও আয়োজনের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু সকালে চারজন লোক হেলমেট পরে এসে পেট্রলবোমা দিয়ে সাউন্ড সিস্টেমের ওপর হামলা করে।’ এতে সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এত বড় আয়োজন নিয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে কিছু জানাননি অন্য নেতারা। এ অনুষ্ঠানটির সঙ্গে মোটা অঙ্কের আর্থিক সম্পর্ক ছিল। এসব কারণে হয়তো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে পারে। ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাকে এ প্রোগ্রামের ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। তবে সেটা কোনো ব্যাপার নয়। আমি বলেছিলাম, এটা যাতে ভালোভাবে হয়। তবে অন্যান্য প্রোগ্রামের ব্যাপারে যেমন হল শাখার নেতা-কর্মীদের সমন্বয় করা হয়, এ প্রোগ্রামে তা করা হয়নি। এটা থেকে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে পারে।’ এ ঘটনায় তার নিজের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও জানান তিনি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, ‘এ হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মল চত্বরে ভাঙচুর চলাকালে হামলার শিকার হয়েছেন এফ রহমান হল ছাত্রলীগের কর্মী ও ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের সমর্থক সাগর রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাগরের মাথায় পাঁচটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ‘মল চত্বরে কী ঘটছে, তা দেখতে রাত ১টার পর আমি সেখানে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কয়েকজন অনুসারী আমার ওপর হামলা করেন।’ সাদ্দাম হোসেনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় তার ওপর হামলা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। একই ঘটনায় এফ রহমান হল ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষারের রুমও ভাঙচুর করা হয় ও তার অনুসারীদের ৩১৩ ও ৩১৫ নম্বর কক্ষে তালা দেওয়া হয়। তিনিও এ ঘটনার জন্য সাদ্দাম হোসেনকে দায়ী করেছেন। এ বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘মল চত্বরে হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা মূল ঘটনা আড়াল করতে এ ধরনের নাটক তৈরি করেছে।’ এদিকে পয়লা বৈশাখ ও চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কনসার্ট সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর। বিষয়টি ডাকসুর সভাপতিকে (উপাচার্যকে) অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে অনুষ্ঠানের বিষয়টি ভিপি জানেন বলে দাবি করেছেন ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার। তিনি বলেছেন, তাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। তবে তিনি অনেক সময় ডাকসুর বৈঠকে থাকেন না।

সর্বশেষ খবর