মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভালো ডাক্তার হতে হলে ভালো মানুষ হতে হবে

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ভালো ডাক্তার হতে হলে ভালো মানুষ হতে হবে

৬২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর পর পয়লা বৈশাখে নিজ ক্যাম্পাসে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। বেলা ১১টায় কপ্টার থেকে নেমেই সোজা স্মৃতিমাখা বিদ্যাপীঠ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। সেখানে প্রথমেই এক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হয়ে বক্তব্য দেন। বক্তব্য শেষে যান হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এরপর কলেজের ১ নম্বর গ্যালারি, ছাত্রাবাস, ছাত্র ক্যান্টিন, ডক্টরস ক্যান্টিনে সহপাঠীদের সঙ্গে তুমুল আড্ডায় মেতে ওঠেন। পরে দুপুরের খাবার। শেষতক শিক্ষক, সহপাঠী ও বন্ধুদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ফিরে গেলেন ঢাকায়। বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ভালো চিকিৎসক হতে হলে আগে হতে হবে ভালো মানুষ। প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘ এক ঘণ্টার আড্ডায় নিজেকে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন সেই তারুণ্যে। পুরনো সঙ্গীদের পেয়ে আপ্লুত হয়েছেন ক্ষণে ক্ষণে। বন্ধুদের সঙ্গে রোমন্থন করেছেন স্মৃতিমাখা দিনগুলোর কথা। গ্রুপ ছবি, সেলফি সবই হয়েছে বন্ধু সহপাঠীদের সঙ্গে। মেলে ধরেন স্মৃতির ঝাঁপি। প্রাণবন্ত আড্ডা হয়েছে বাংলা ভাষায় জানিয়ে লোটে শেরিংয়ের বন্ধু ডা. আসাদুজ্জামান রতন বলেন, ‘আমরা ৭৪ জন বন্ধু একসঙ্গে লোটে, তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘণ্টাখানেক পার করেছি। শুরুতেই বলেছেন এ দিনটির জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বিয়ে প্রথার সঙ্গে তার বিয়েটার অনেকটা মিল আছে। লোটে যখন ভুটানে আপাদমস্তক চিকিৎসক তখন একজন এসেছিলেন তার কাছে সেবা নিতে। সঙ্গে ছিলেন বর্তমানে লোটের স্ত্রী ডা. উগেনডেমা।

সেখান থেকেই ভালোলাগা। একটু একটু আগানো এরপর বিয়ে। কথাগুলো খুব মজা করে বলেছিলেন।’ লোটে শেরিংয়ের এই বন্ধু আরও জানান, ‘তবে ভুটানের স্বাস্থ্যসেবায় তিনি আমাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। বলেছেন, সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসাসেবায় সহায়তা করতে। আমরা তাকে আশ্বস্ত করেছি। বলেছি যে কোনো প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াব।’ এর আগে কলেজ মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ ডা. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন লোটে শেরিং। সেখানেও বক্তব্যের শুরুটা কয়েক লাইন ইংরেজি বলে প্রায় পুরোটাই বলেন বাংলায়। সেই ১৯৯১ সাল থেকে স্মৃতিচারণা করেন। ভুটানের এই প্রধানমন্ত্রী নিজ বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘ভালো চিকিৎসক হতে হলে উচ্চাকাক্সক্ষী হওয়ার দরকার নেই। সবার আগে হতে হবে ভালো মানুষ। একজন চিকিৎসকের কাছে রোগীর সর্বোচ্চ সেবা পাওয়ার অধিকার আছে।’ ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. টান্ডি দরজির কারণেই তিনি আজ প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে বলেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের একই কক্ষে আমি ও আমার সহপাঠী ডা. টান্ডি দরজি থেকেছি। এখনো একসঙ্গে আমরা রাজনীতি করছি। এ দীর্ঘ সময়ে আমাদের মাঝে কোনো মনোমালিন্য হয়নি। আজকে তার কারণেই আমি প্রধানমন্ত্রী, তিনিই আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন।’ অনুষ্ঠানে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. টান্ডি দরজি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী লায়োন পুদিহেন ওয়াংমু, প্রধানমন্ত্রীর সহর্ধমিণী ডা. উগেনডেমা, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. লক্ষ্মীনারায়ণ মজুমদার, ময়মনসিংহ বিএমএ সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভুইয়াসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ডা. লোটে শেরিংয়ের আগমন উপলক্ষে মেডিকেল কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। নগরজুড়ে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। ২৮তম ব্যাচের ছাত্র ডা. লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে বিদেশি কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করে ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বাংলাদেশ সফর। বন্ধুদের সঙ্গে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের জন্য ২০ বছর পর তিনি ময়মনসিংহে এসেছেন।

সর্বশেষ খবর