শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইসির ১০ দফা নির্দেশনা

বিশেষ কমিটির সুপারিশ ছাড়া ভোটার নয় ৩২ উপজেলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবারও ভোটার তালিকা হালনাগাদে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৩২ উপজেলায় বিশেষ নজর রাখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কোনোভাবেই যাতে রোহিঙ্গারা ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে ১০ দফা নির্দেশনাসহ কঠোর তৎপরতা রাখতে মাঠ কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ভোটারযোগ্যদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে ইসির সমন্বয় সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গতকাল সভা শেষে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও চট্টগ্রামের ৩২ উপজেলাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই ভোটার হতে না পারে সে জন্য উদ্যোগ রয়েছে আমাদের। রয়েছে ভোটার নিবন্ধনে বিশেষ ফরম। এবারও আমরা নির্দেশ দিয়েছি, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় ইউএনওর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশ ছাড়া কাউকে ভোটার করা যাবে না।’

বিশেষ এলাকায় বিশেষ কমিটির যাচাই : রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ উপজেলা হলো কক্সবাজারের সদর, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা; বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি; রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া,  বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা।

ইসির নির্দেশনা হচ্ছে, বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সব জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরগুলো অনলাইনে যাচাই করতে হবে। যাচাইকালে (ক) ভাই/বোনের ডাটাবেজে পিতা/মাতার নামের সঙ্গে আবেদনকারীর ফরম-১-এ উল্লিখিত পিতা/মাতার নামের মিল থাকতে হবে। (খ) চাচা/ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সঙ্গে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে। (গ) প্রয়োজনে নিকটাত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি/তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া উপজেলা বিশেষ কমিটি প্রতিটি ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত দেবে।

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা করেন অথবা মিথ্যা তথ্য দেন অথবা মিথ্যা/জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারও গাফিলতি থেকে থাকে, তা হলে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে।

হালনাগাদে উদ্বুদ্ধকরণ, তথ্য সংগ্রহকারীদের তদারকি : ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের, মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে, নারী ভোটারদের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আলাদা আলাদা প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালাতে বলা হচ্ছে। শুধু একটি জায়গায় বসে যেন তথ্য সংগ্রহ করা না হয়; বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য নিতে হবে। তথ্য সংগ্রহকারী যাতে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন সে বিষয়ে তদারক করা হবে বলে জানান সচিব। তথ্য সংগ্রহকারীদেরও নজরদারিতে রাখা হবে, বলেন তিনি।

হিজড়াদের পরিচয়ে : ইসি সচিব হেলালুদ্দীন জানান, এবার হালনাগাদের সময় হিজড়া পরিচয়ে ভোটার হতে পারবেন তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকরা। ভোটার নিবন্ধন ফরমে ‘লিঙ্গ পরিচয়’ অপশনে নারী, পুরুষের পাশাপাশি হিজড়া রাখা হয়েছে। হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা ভোটার তালিকা থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

স্মার্টকার্ড পাবেন : এবার হালনাগাদে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটাররা ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ তালিকাভুক্ত হবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের সময় তাদের হাতে স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন ইসি সচিব। বর্তমানে ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছেন। হালনাগাদে প্রায় ৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ হবে এবার। কম বয়সীরা ১৮ বছর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তালিকাভুক্ত হবে। হালনাগাদের সময় ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছাপও নিয়ে রাখা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর