শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১০ লাখ অবৈধ মোবাইল ফোন!

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

কোনো ভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩১টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহার। হাত বাড়ালেই মিলছে বাংলাদেশের যে কোনো অপারেটরের মোবাইল সিম। মাত্র ২৫০-৩০০ টাকায় বায়োমেট্রিক নিবন্ধন বা আঙ্গুলের ছাপ ছাড়াই রোহিঙ্গারা স্থানীয় দোকান এবং অসাধুচক্রের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে সিমকার্ড। এখানে আশ্রিত ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে অনেকেরই ব্যস্ত সময় কাটে ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তাই অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত এই জনগোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো মিথ্যা ভিডিওবার্তা আর সংবাদে দ্রুত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান প্রশাসন ও টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ও সহিংস ঘটনার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া-টেকনাফের সরকারি বনভূমিতে অস্থায়ীভাবে আশ্রিত এসব রোহিঙ্গার অর্ধেকও যদি একটি করে মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার করেন, তাতেও অন্তত এখানে ৬ লক্ষাধিক মোবাইল ব্যবহৃত হচ্ছে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে। আর একাধিক সিমকার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যাসহ হিসাব করলে এর পরিমাণ ১০ লাখের মতো হবে বলে জানান স্থানীয় মোবাইল সিম বিক্রেতারা। আর এই অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতারা মনে করেনÑ এসব অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করছে। এতে খুব সহজে এখানকার রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তা নয়, মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্বগোত্রীয়দের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল হতে দিচ্ছে না রোহিঙ্গাদের একটি শক্তিশালী চক্র। মোবাইলে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন বিরোধী প্রোপাগান্ডা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ঐকমত্যে আসতে দিচ্ছে না প্রত্যাবাসন বিরোধীরা। তাই অবৈধ মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ককে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার অন্যতম কারণ বলেও ধারণা করছেন তারা।

এদিকে উখিয়ার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান রশিদ আহম্মদ জানান, ক্যাম্পে অপরাধ প্রবণ কতিপয় রোহিঙ্গা মোবাইলে মিয়ানমারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে এদেশের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখানকার সার্বিক পরিস্থিতি সুনির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মোবাইল সিমগুলো জব্ধ করে যাচাই-বাছাই করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ইতিপূর্বে ক্যাম্পে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ১০-১২ জন মোবাইল দোকানদারকে আটক করা হয়েছে। এবার বড় ধরনের অভিযান বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে। গোয়েন্দা বিভাগও এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর