শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
টানা দরপতনে শেয়ার বাজার

আস্থার সংকটে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারী

আলী রিয়াজ

২০১০ সালের ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হয়ে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। এসেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন তিন মাসের মধ্যে স্থিতিশীল করবেন শেয়ারবাজার। কিন্তু গত নয় বছরে কোনো উন্নতি হয়নি শেয়ারবাজারের। প্রতিদিন কমছে শেয়ার দর। নিঃস্ব রিক্ত হচ্ছেন বাজারের ২৮ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারী। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দফায় দফায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করলেও বাজার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ফলে দেশের পুঁজিবাজারে সাড়ে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীর মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক, আস্থাহীনতা ও হতাশা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মতিঝিলের রাস্তায় প্রতিদিন বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে আস্থা সংকটের কারণে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। বাজারে সক্রিয় কারসাজি চক্র। এতে ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম  বেশি বাড়ে। বাজারে এমন কারসাজি চললেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে বিএসইসি বলছে, বাজার স্থিতিশীল। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান  দেখা দেয়। কিন্তু সে তেজিভাব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নতুন সরকারের মেয়াদ এক মাস পার না হতেই দরপতনের কবলে পড়ে পুঁজিবাজার। প্রায় তিন মাস ধরে এ দরপতন অব্যাহত রয়েছে। ২০১০ সালের একদম শেষ দিকে শেয়ারবাজারে ধস শুরু হলে খুবই দ্রুতগতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পুনর্গঠন করা হয়েছিল। ২০১১ সালের ১৫ মে বাংলাদেশ বিএসইসিতে নিয়োগ পান নতুন  চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। তার প্রতিশ্রুতি বাজারে আস্থা ফেরানো ও স্থিতিশীল করা। কিন্তু বাজার এখনো আস্থাহীন ও অস্থিতিশীল। ২০১০ সালের শেয়ার কারসাজি চক্রটি এখন আরও শক্তিশালী ও সক্রিয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারাই। সূচকের ওঠানামা খুবই নিয়ন্ত্রিত। শেয়ারবাজারে কোনো  আস্থাই নেই বিনিয়োগকারীদের। ২৮ লাখ বিনিয়োগকারী, বাজারে কার্যক্রম চালানো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর জন্য কে দায়ী। বাজার স্থিতিশীল করার দায়িত্ব কার? কেউ এই প্রশ্নের জবাব দেয় না। রাস্তায় নেমে পুঁজি হারানো আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীর বিক্ষোভেও কোনো উন্নতি হচ্ছে না। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৪ মার্চ ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ তা ৩ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ সময়ে ডিএসইর বাজারমূলধন প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা কমেছে। একই সময়ে ডিএসইর মূল্যসূচক ৫ হাজার ৬৫৫ পয়েন্ট থেকে কমে ৫ হাজার ৩২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর সব কোম্পানির  শেয়ারের দাম কমেছে গড়ে ৫ শতাংশেরও বেশি। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। এ সংকট দূর করতে হবে। কারসাজির মাধ্যমে কেউ পুঁজি হাতিয়ে নিলে তার বিচার হবে, বিনিয়োগকারীদের এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে বাজারে নতুন পুঁজি আসবে। তারল্য সংকট কাটাতে সহায়তা করবে। ডিএসইর সাবেক পরিচালক ও মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই নাহরিন বলেন, আমরা স্ট্রাটেজিক পার্টনার থেকে সাড়ে নয়শ কোটি টাকার যে শেয়ারে বিনিয়োগ করেছি তাতেও লোকসানে রয়েছি। মানুষের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, বাজার আরও কমবে। একটি পেনিক তৈরি করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোম্পানির আইপিও দিয়ে বাজারের চাহিদার চেয়ে সাপ্লাই বেশি করা হয়েছে। যেসব কোম্পানির সক্ষমতা নেই তাদেরও বিশাল শেয়ার সংখ্যা। বৃহৎ মূলধনী কোম্পানি না এনে বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর