বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল দুজনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাস্তায় দুমড়ে-মুচড়ে ছিল যাত্রীবাহী বাসটি। ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রাইভেট কারেও লেগে ছিল রক্তের দাগ। পাশে উল্টে পড়ে ছিল রিকশা। এদিকে দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে পথচারীদের জটলা। এ দৃশ্য রাজধানীর ব্যস্ততম মৎস্য ভবন মোড়ের। এখানেই গতকাল সকাল সোয়া ৭টার দিকে স্বাধীন পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাসের সঙ্গে তিন দিক থেকে আসা দুটি প্রাইভেট কার, একটি মাইক্রোবাস ও একটি রিকশার চতুর্মুখী সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে মারা যান রিকশাচালক। আহত অবস্থায় চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে আরও একজনের মৃত্যু হয়। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়।  এ ঘটনার পর গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড়ে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ রেকার এনে সকাল ৯টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলো রাস্তা থেকে সরিয়ে নিলে ফের যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিযোগিতা করে চালানোর সময় স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে একাধিক যানবাহনের সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। নিহত রিকশা চালকের নাম সুমন (২৫)। অন্যজন রিকশার যাত্রী ওহেদুল ইসলাম সেলিম ওরফে সেলু (৪০)। তিনি ১৫৯ মধ্য বাসাবো সবুজবাগের বাসিন্দা। তিনি বাসাবো বালুর মাঠে ফুলের ব্যবসা করতেন বলে জানা গেছে। সকালে বাসা থেকে রিকশায় ফুল কেনার জন্য শাহবাগ ফুল মার্কেটে এসেছিলেন। পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। আহতরা হলেন- শরিফ (২০), নূরে আলম (৩০) এবং আরাফ নামে ১২ বছরের এক শিশু। জানা গেছে, আহত আরাফ প্রাইভেটকারে ছিল। সে একটি স্কুলের ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। দুর্ঘটনার সময় তার মাথায় আঘাত লাগে। আহত আরাফ ও শরীফ দুপুরের আগে ঢামেক হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, ভোরে যানজট না থাকায় শাহবাগ থেকে পাল্লা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে আসছিল দুটি বাস। রমনা পার্কের গেটে এসে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে স্বাধীন পরিবহনের বাসটি। এ সময় মৎস্য ভবনের সামনে বাসটির সঙ্গে জাতীয় প্রেস ক্লাব, কাকরাইল ও শিল্পকলা একাডেমির দিক থেকে আসা দুটি প্রাইভেটকার এবং একটি মাইক্রোবাসের চতুর্মুখী সংঘর্ষ হয়। রাস্তার পাশে থাকা রিকশাটিও এ সময় দুমড়ে-মুচড়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান রিকশার চালক। দুপুরে ঢামেক মর্গে রিকশা চালক সুমনের লাশ শনাক্ত করেন মা বানেছা বেগম, বড়বোন জিয়াসমিন আক্তার শাবানা ও স্ত্রী শান্তা আক্তার। লাশ শনাক্তের পরই কান্নার রোল পড়ে যায় মর্গে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আশপাশের বাতাস। অকালে স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন শান্তা আক্তার। তার চোখ গড়িয়ে ঝরছিল পানি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শান্তা আক্তার বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বড়গুন্ডাপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে সুমন।

২০১১ সালে তাদের বিয়ে হয়। বর্তমানে দুই ছেলে শেফায়েত (৪) ও শাহাদাতকে (৫) নিয়ে শাহজাহানপুর মির্জা আব্বাস মহিলা কলেজের পাশে শামীমের টিনশেড বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তারা।

ঘটনার পরই স্বাধীন পরিবহনের চালক নজরুল ইসলামকে আটক করে রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) এস এম মুরাদ আলী।

রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জহিরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক বাসচালক জানিয়েছেন বাসটি ব্রেকফেল করেছিল।

সর্বশেষ খবর