বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সরকারের ১০০ দিন উদ্যমহীন উৎসাহহীন উচ্ছ্বাসহীন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের ১০০ দিন উদ্যমহীন উৎসাহহীন উচ্ছ্বাসহীন

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিন ছিল উদ্যোগহীন ও উচ্ছ্বাসহীন এবং একই সঙ্গে উদ্যমহীন। এমন মূল্যায়ন করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। বর্তমান সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে গতকাল সিপিডি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ মন্তব্য করেন। তিনি এমনও মন্তব্য করেছেন, বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যা সোনার সংসারে আগুন লাগাতে পারে। তার মতে, কোথাও যেন একটি প্রতীতগোষ্ঠী সরকারকে করায়ত্ত করে নীতি নির্ধারণ করছে; যার দরুন ব্যাংক খাত ও পুঁজিবাজারের ওপর মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হচ্ছে। ঋণখেলাপিদের বড় বড় ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক খাতের সংস্কারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিন : বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান। আরও বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১১ সালের পর এই প্রথম সরকারের বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ধীরগতি চলছে। মূল্যস্ফীতি টানা দুই মাস ধরে বাড়ছে। প্রবাসী আয় কমছে। অর্থবছর শেষে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়াবে ৭২ হাজার কোটি টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কর ছাড় দেওয়ার কারণে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। এর মধ্যে শুধু পোশাক খাতেই ৯৬০ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। এ খাতে সুশাসনের ঘাটতি রয়েই গেছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে; যা মূলত সামষ্টিক অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এতে বলা হয়, খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ভালো ঋণগ্রহীতাদের ছাড় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কারা ভালো ঋণগ্রহীতা সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা আসেনি। এটা নির্দিষ্ট করা উচিত। এ ছাড়া মূল প্রবন্ধে পাবলিক ফাইন্যান্স, ব্যাংক খাতের সংস্কার ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য কয়েক দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে ড. দেবপ্রিয় বলেন, শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কোনোরকম দুর্নীতি তারা সহ্য করবে না। জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। কিন্তু আমরা দেখছি রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিতরে, অন্যান্য সামাজিক সেবার ক্ষেত্রে সেই দুর্নীতি প্রকটভাবে রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন নীতির সংস্কার। প্রয়োজন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান। প্রয়োজন সর্বত্র সুশাসন। কাঠামোগত সংস্কার ও উন্নয়ন। তবে গত তিন মাসে সরকারের অনেক ভালো কাজও রয়েছে। এর আগের সময়েরও কিছু ধারাবাহিক ভালো কাজ রয়েছে। তিনি বলেন, এ সময়ে সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি বিভিন্ন কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সুদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর ফলে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হবে বলে মনে করি না। মনে হয় যেন কোথায় সরকারকে একটি প্রতীতগোষ্ঠী করায়ত্ত করে নীতি নির্ধারণ করছে। ড. দেবপ্রিয় জিডিপি প্রবৃদ্ধি গণনার পদ্ধতির সমালোচনা করে বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দেখছি প্রবৃদ্ধিনির্ভর আর্থনৈতিক আলোচনা। কেমন একটা প্রবৃদ্ধি আচ্ছন্নতা বা আকৃষ্টতা দেখতে পাচ্ছি। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, খেলাপি ঋণ কমার লক্ষ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেওয়া সুবিধার ফলে ঋণখেলাপিরা ও দুর্বল ব্যাংক উৎসাহিত হবে এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারল্য সংকট দেখা দেবে। দুঃখজনক হলো, সত্যিকার অর্থে ঋণখেলাপি না কমিয়ে, সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে এ সমস্যা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যার ফলে আমরা গুড প্র্যাকটিস থেকে ব্যাড প্র্যাকটিসে চলে যাচ্ছি। সুবিধা দেওয়ার ফলে ঋণখেলাপিরা উৎসাহিত হবে। সেই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকও উৎসাহিত হবে। তার ফলে তারল্যের ওপর প্রভাব পড়বে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা একটি ব্যাংক কমিশনের কথা বলেছিলাম। আমরা তার জন্য কাজ করছি। সরকারের কাছে আমরা বার বার ব্যাংকিং কমিশন করার কথা বলেছি। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন আমরা শুধু ব্যাংকিং কমিশন নয়, নাগরিকদের নিয়েও কমিশন করার চিন্তাভাবনা করছি।

সর্বশেষ খবর