বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

শ্রমিক অধিকারকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছে না মালিকপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরবর্তী ছয় বছরে তৈরি পোশাক খাতে কারখানা নিরাপত্তা, তদারকি, শ্রমিকের মজুরি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি খাতে অগ্রগতি হয়েছে। তবে মালিকপক্ষ এখনো ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিলেও শ্রমিক অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তাকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ ছাড়া বিভিন্ন অংশীজন কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগগুলোর ৩৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হলেও অপর ৪৯ শতাংশ উদ্যোগের বাস্তবায়ন এখনো চলমান এবং ১২ শতাংশ উদ্যোগ ধীর গতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে।  রাজধানীর মাইডাস ভবনে গতকাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির উদ্যোগে তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন : অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানানো হয়। অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাক খাতে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে ১২ দফা সুপারিশ জানানো হয়। গবেষণায় দেখা যায়, শ্রম আইনে বেশকিছু ইতিবাচক সংশোধন আনা হলেও উৎসবকালীন ছুটি, প্রসূতিকালীন সুবিধা, শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারার অপপ্রয়োগের সুযোগ ইত্যাদি নানাবিধ চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। এ ছাড়া দেশি কাপড় ব্যবহারে রপ্তানির ৪ শতাংশ নগদ সহায়তার অর্থপ্রাপ্তিতে ৩-৪ বছরের দীর্ঘসূত্রতা এবং অর্থপ্রাপ্তির জন্য ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আছে। সংসদে উত্থাপিত ১০০ ঋণখেলাপির তালিকায় দেখা যায়, তৈরি পোশাক খাতের ২৬টি প্রতিষ্ঠান এবং পোশাক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। যৌথ দরকষাকষির পরিবেশ না থাকায় শ্রম অধিদফতরের সালিশি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ৩০ মিটারের ঊর্ধ্বে কোনো ভবনের আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী কারখানা নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে জাতীয় উদ্যোগ, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কর্তৃক তালিকাভুক্ত প্রায় সব কারখানা (৪৩৪৬টি) প্রাথমিক পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এ সমন্বিত উদ্যোগের ৭৩ শতাংশ (২২০৭) কারখানার সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও প্রায় ২৮ শতাংশ কারখানার অগ্রগতি ৫০ শতায়শের নিচে।

এ ছাড়া নতুন স্থানান্তরিত ৯৫০টি কারখানা এখনো কোনো পরিদর্শন কার্যক্রমে যুক্ত হয়নি।

 অন্যদিকে বিজিএমইএ কর্তৃক সরকারি নির্দেশনা না মেনে ২০০ নন-কমপ্লায়েন্ট কারখানায় ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) সুবিধা অব্যাহত রাখার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে ইতিবাচক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরেও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের দায়েরকৃত ৪৯৪৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও কলকারখানা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে সংস্কার কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় না।

গবেষণা অনুযায়ী, শ্রমিক অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তায় বিভিন্ন অগ্রগতি হলেও এখনো নানাবিধ চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। যেমন, মজুরি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৮ হাজার  টাকা নির্ধারণ করা হলেও অধিকাংশ সাবকন্ট্রাক্টনির্ভর কারখানায় ন্যূনতম মজুরি প্রদান করা হয় না। আবার প্রকৃত হিসেবে ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে যে মূল মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে তা বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মজুরি নির্ধারণে বৎসরিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের বিধান প্রয়োগ করা হয় না। শ্রমিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয়টি গ্রেডে পুনরায় মূল মজুরি বৃদ্ধি করা হলেও গ্রেড নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি না থাকায় মালিকপক্ষের ইচ্ছানুযায়ী গ্রেড নির্ধারণ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী ছয় বছরে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা পর্যাপ্ত নয়। বিশেষ করে শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনগত দুর্বলতা ও প্রায়োগিক ঘাটতির কারণে প্রত্যাশিত অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া।

সর্বশেষ খবর