শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

একজনের শপথ বাকিরা অপেক্ষায়

জাহিদ বললেন, সংসদে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলব । শাস্তিমূলক ব্যবস্থা : বিএনপি

মাহমুদ আজহার

একজনের শপথ বাকিরা অপেক্ষায়

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানকে শপথ বাক্য পাঠ করান -পিআইডি

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নিলেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত এমপি জাহিদুর রহমান। একই পথে হাঁটছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি চারজন নির্বাচিত এমপি। তারাও এখন শপথের অপেক্ষায়। এরই মধ্যে সংসদ সচিবালয়ে যোগাযোগও করেছেন এই চার নেতা। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে যে কোনো দিন বিএনপির ওই চার নেতা শপথ নিতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, যারা শপথ নেবেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সর্বশেষ গত সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন ৮ জন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে দুজন গণফোরামের। বাকি ছয়জন বিএনপি থেকে নির্বাচিত। গণফোরামের দুই নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও মোকাব্বির খান এরই মধ্যে শপথ নিয়েছেন। গতকাল বিএনপি থেকে শপথ নিলেন জাহিদুর রহমান। ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি হারুন অর রশীদ এবং বগুড়া-৪ আসনের এমপি মোশাররফ হোসেন এখন শপথ নেওয়ার অপেক্ষায়। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব ও বগুড়া-৬ আসনের এমপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিএনপি সংসদে যাবে না, শপথ নেবে না। যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেন, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, এটা সাংগঠনিক অপরাধ। দলের সিদ্ধান্ত যেটা ছিল, সেটাই এখনো আছে। কেউ যদি তা অমান্য করে, তাহলে সেটা তার একান্ত সিদ্ধান্ত। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোনো ভোট হয়নি। আমরা ওই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছি। যেখানে আমরা নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করলাম, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সিদ্ধান্ত হলো যে, আমাদের নির্বাচিতদের সংসদে যাওয়াটা সঠিক হবে না। আমরা এই সংসদ নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সংসদে যেতে পারি না।’ জানা যায়, বিএনপির কেউ কেউ শপথ নিতে পারেন গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে স্কাইপিতে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে তারেক রহমানসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একমত হন, বিএনপির কেউ শপথ নেবেন না। সংসদেও যাবেন না। ব্যক্তিগতভাবে কেউ গেলে তার বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  জাহিদুর রহমান ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গতকাল শপথ নেওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বহিষ্কার নিয়ে শঙ্কিত নই। দল আমাকে বহিষ্কার করলে করুক। আমি তো আর দলকে ছেড়ে যাচ্ছি না। আমি দলের সঙ্গেই থাকব। ৩৮ বছর ধরেই তো আছি। সুতরাং আমি এই দলেরই লোক।’ সংসদের আজকের অধিবেশনে তিনি যোগ দেবেন না জানিয়ে জাহিদুর রহমান বলেন, ‘মহাসচিব ছাড়া দলের বাকি সদস্যরাও শপথ নিতে পারেন। দেখি তারা আসেন কিনা। এলে একসঙ্গে যোগ দেব।’ জাহিদের শপথের পর তার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন কামাল আনোয়ার আহম্মেদ। ছাত্রদলের সাবেক এই সহ-সভাপতি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে তারেক রহমানসহ দলের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে জাহিদুর রহমান শপথ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে। বগুড়া-৪ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন বলেন, এলাকার জনগণ চায় আমি সংসদে যাই। কিন্তু আমি এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। দল নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সংসদে যাবে না। আমি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যেতে চাই না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, দলের সিদ্ধান্ত বদলায় কিনা, আমরা এখন সেই অপেক্ষায় আছি। আমাদের নির্বাচনী এলাকা থেকে জনগণের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি দাবি রয়েছে আমরা যেন সংসদে যাই। সেটা আমরা দলের নেতাদের জানিয়েছি। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আমাদের শপথ নেওয়ার পক্ষে মতামত যেন দেওয়া হয়, সেটাও আমরা জানিয়েছি। এখন আমরা দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শপথ নেব কিনা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। দলের সিদ্ধান্তও জানি। শপথ নিলে সবাইকে জানাব। তবে আমি নানামুখী চাপে আছি।’ ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি উকিল আবদুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা বলেছেন, উকিল আবদুস সাত্তার যে কোনো দিন শপথ নিতে পারেন।

সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলব : শপথ নেওয়ার পর বিএনপি থেকে নির্বাচিত এমপি জাহিদুর রহমান বলেন, সংসদে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলব। সরকারের অন্যায়-অবিচারের কথা বলব। আমি মনে করি, সবারই শপথ নেওয়া উচিত। কারণ আমাদের নেত্রী কারাগারে। তিনি অসুস্থ। দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।  তারা জেলে আছে। বাইরে থেকে কিছুই হচ্ছে না। সুতরাং বাইরে থেকে লাভ কী? তার চেয়ে ভিতরেই যাই, অন্তত চিৎকার করে কথা তো বলতে পারব। তিনি বলেন, ‘জন্মের পর থেকে এই আসনে বিএনপি কখনো জেতেনি। ১৯৯১ সাল থেকেই আমি নির্বাচন করে যাচ্ছি। সংসদ নির্বাচন করেছি মোট চারবার। তাই এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ আমার শপথ নেওয়ার পক্ষে। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই আসনে কখনো বিএনপি জেতেনি। অর্থাৎ ধানের শীষের জন্মের পর আমিই প্রথম জিতলাম।’ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘এমনিতে আমার আর নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। আমি ক্লান্ত। ১৯৯১ সাল থেকেই তো নির্বাচন করে যাচ্ছি। চারবার সংসদ নির্বাচন এবং একবার পৌর নির্বাচন। বাপের টাকায় রাজনীতি করি। দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা আছে। মামলা চালানোর টাকা তো দল দেয় না। আমাদেরই দিতে হয়।’ বিএনপির নেতারা আপনাকে গণদুশমন বলে আখ্যায়িত করেছে। এ বিষয়ে জাহিদুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে দলের মহাসচিব আমাদের ৫ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে ডেকেছিলেন। তিনি শপথ না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে এসে সংসদে যোগ দিয়েছি। সুতরাং এ কথা তারা বলতেই পারেন। আরও বলবেন। তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’

সর্বশেষ খবর