শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাহিদে তোলপাড় বিএনপি

মিশ্র প্রতিক্রিয়া, বাকি এমপিদের শপথ প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাহিদে তোলপাড় বিএনপি

ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান জাহিদ শপথ নেওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে বিএনপিতে। এ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে সন্দেহ-অবিশ্বাসও বেড়েছে। চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি। সারা দেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। রাজনীতিতেও এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ বিএনপির শপথ ইস্যুটি। দু-এক দিনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি হারুনুর রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি আমিনুল ইসলাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি উকিল আবদুস সাত্তার শপথ নিতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। তবে জাহিদ ইস্যুতে আজ সন্ধ্যায় বসছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি। স্কাইপিতে লন্ডন থেকে বৈঠকে যোগ দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে জাহিদসহ যারা সংসদে যোগ দেবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। বিএনপির বড় অংশই মনে করছে, জাহিদের শপথে চরম ক্ষতি হয়ে গেল বিএনপির। দলের রাজনীতি বলে আর কিছু থাকল না। বিএনপির গুটিকয়েকজন শপথ নেওয়া মানে এ সরকার ও ৩০ ডিসেম্বরের ভোটকে বৈধতা দেওয়া। এত জুলুম, নির্যাতন, বেগম জিয়ার কারাভোগ, হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেফতারের পরীক্ষা দেওয়াও ব্যর্থ হবে। বৈধতা দেওয়া হবে ভোটবিহীন সংসদকে। এতে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আরও হতাশ হয়ে যাবে। আগামী দিনে খালেদা জিয়াসহ গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনে মাঠের কর্মীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য দলের ক্ষুদ্র একটি অংশ মনে করছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে বিএনপি যদি ছয়জনকে নিয়েও সংসদে যায়, এতে বিএনপির দিকেই গণমাধ্যমের ফোকাস থাকবে। ক্ষুদ্র বিরোধী দলই সংসদে সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে। বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনেও রাজপথের পাশাপাশি সংসদে ঝড় তোলা সম্ভব হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের উন্নয়ন বঞ্চিত করাও ঠিক হবে না। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ শপথ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা আমাদের দলের মুখপাত্র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন। এটাই আমার বক্তব্য।’ নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, পর্দার আড়ালে বেগম জিয়ার কারামুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকারের সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা এ নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে যে কোনো নাটকীয় ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। প্যারোল বা জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশের বাইরেও চলে যেতে পারেন বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া। দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া হলে বিএনপির সব এমপিই পর্যায়ক্রমে শপথ নিতে পারেন। কোনো কারণে আলাপ-আলোচনার পথ ভেস্তে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন কারাবন্দী বেগম জিয়াকে কেরানীগঞ্জ বা কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। সংসদে যেতে আগ্রহী বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, এ কারণেই মূলত তাদের শপথ নিতে দেরি হচ্ছে। বেগম জিয়া জামিনে মুক্তি পেলে তাদের সংসদে যাওয়ার পথও সুগম হবে। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে যে কোনো উপায়ে মুক্ত করা এবং সংসদে যোগদান একই সূত্রে গাঁথা। বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে ইতিবাচক কিছু হচ্ছে এমনটা মনে করছেন বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ। এ জন্য জাহিদের শপথ নেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাকি নেতারাও ধারাবাহিকভাবে শপথ নেবেন।  স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবেÑতা গঠনতন্ত্রে বলা আছে। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে বৈঠকে এ নিয়ে কোনো এজেন্ডা আছে কিনা আমি জানি না।’ এদিকে জাহিদুর রহমানের শপথের পর নিজ সংসদীয় আসনে বিএনপি নেতা-কর্মী ও সর্বসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এলাকার সাধারণ মানুষ বলছেন, ৩০ বছর ধরে জাহিদ বঞ্চিত। এবার শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ খুবই খুশি। অন্যদিকে দলের নেতা-কর্মীরা জাহিদের শপথে কিছুটা অসন্তুষ্ট। এ নিয়ে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না। কেন্দ্র তার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা দেখেই তৃণমূল বিএনপি তার ব্যাপারে বক্তব্য দেবে বলে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর