শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মঞ্চে মোকাব্বির, যোগ দেননি মন্টু দল ছাড়ার ঘোষণা পথিকের

গণফোরামের কাউন্সিলে ক্ষোভ বিক্ষোভ

মাহমুদ আজহার

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল গণফোরামে হ-য-ব-র-ল শুরু হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী মোকাব্বির খান গতকাল যোগ দিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে। এ নিয়ে বিশেষ কাউন্সিলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয় হৈচৈ। মোকাব্বিরের কাউন্সিলে যোগদানকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু নেতা-কর্মী অনুষ্ঠানস্থলও ত্যাগ করেন। মোকাব্বির খান গণফোরামের কাউন্সিলের মঞ্চে থাকায় ক্ষোভে দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চ ছাড়েন দলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। এদিকে কাউন্সিলে যোগ দেননি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। গণফোরামের নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, মন্টু অসুস্থ। তবে মন্টু জানিয়েছেন, অতীতে গণফোরামের কোনো অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেননি এমনটি ঘটেনি। তিনি অসুস্থ নন। একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোকাব্বির খানের কাউন্সিলে যোগদানে তারা ‘হতাশ’ হয়েছেন। সিলেট-২ আসনে গণফোরামের ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে  বিজয়ী গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান। তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যোগ দিলে তার বিরুদ্ধে দলের ভিতর থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। তাকে সতর্ক নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নোটিস পাঠানো হয়নি বলে গণফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। শপথের আগে মোকাব্বির খান বলেছিলেন ড. কামাল হোসেনের অনুমতি নিয়ে তিনি সংসদে শপথ নিয়েছেন। শপথের দুই দিন পর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মোকাব্বির হেনস্তা হন। ড. কামাল তাকে চেম্বার থেকে বের করে দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি এখান থেকে বেরিয়ে যান, গেট আউট। আমার চেম্বার ও অফিস আপনার জন্য চিরতরে বন্ধ।’ গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে বেলা পৌনে ১১টায় ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এই বিশেষ কাউন্সিল শুরু হয়। এ অধিবেশনের আগেই ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরের মধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন মোকাব্বির খান। অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. কামাল  হোসেনের আসনের প্রথম সারিতে তিন চেয়ারের পরেই মোকাব্বির খান বসেন। তার ডান পাশে বসেন রেজা কিবরিয়া ও বাম পাশে অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ। বিভিন্ন জেলা থেকে কাউন্সিলে যোগ দেওয়া নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তারা কোনোভাবেই মোকাব্বির খানকে মেনে নিতে পারছেন না। ড. কামাল একক সিদ্ধান্তে মোকাব্বির খানকে কাউন্সিলে আসতে দিতে পারেন না। কারণ গণফোরাম ড. কামালের একার কোনো সংগঠন নয়। এ দলের একটি গঠনতন্ত্র আছে। নিয়মে চলে গণফোরাম। এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাউন্সিলের পুরো ব্যয় নির্বাহ করেছেন মোকাব্বির খান। তাই ড. কামাল তাকে মঞ্চে বসিয়েছেন। কাউন্সিল অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি জানি ও শুনেছি ঘটনা। হাউসে অনেকে বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করেছেন। এটা সভাপতি বলতে পারবেন কেন গেলেন, কীভাবে গেলেন। তাকেই জিজ্ঞাসা করুন। তবে আমি হতাশ হয়েছি। আমাদের আর কোনো রাজনীতি রইল না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা অগ্রহণযোগ্য ও অনৈতিক কাজ হয়েছে। এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা হয়ে গেছে। আমি এ রকম সম্মেলনে যাব না।’

কাউন্সিল অধিবেশনে থাকা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘মোকাব্বির খানকে তো বলা হয়নি। তিনি নিজে নিজেই চলে এসেছেন। এভাবে চলে এলে আর কী বলার থাকে? গত ২ এপ্রিল দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মোকাব্বির খান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন  চৌধুরীর কাছ থেকে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন। এর আগে ৭ মার্চ দলের সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নেন। অবশ্য প্রাথমিক সদস্য হওয়ায় সেদিনই সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু মোকাব্বির খান প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় ২৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বৈঠকে তাকে কারণ দর্শানো নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

বিশেষ কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানমঞ্চে একই সারিতে বসেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এস এম আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মোকাব্বির খান, রেজা কিবরিয়া, আমসা আমিন, সিরাজুল হক, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিকউল্লাহ,  শফিকুর রহমান খান, ফরিদা ইয়াছমিন, এস এম খালেকুজ্জামান, শান্তিপদ ঘোষ, মোশতাক হোসেন প্রমুখ। সর্বশেষ গণফোরামের  কাউন্সিল হয় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ’৯৩ সালে ড. কামাল হোসেন গণফোরাম গঠন করেন।

দল ছাড়ার ঘোষণা পথিকের : মোকাব্বির খানের কাউন্সিলে অংশগ্রহণে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া মোকাব্বির খান গণফোরামের কাউন্সিলের মঞ্চে থাকায় ক্ষোভে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। তিনি বলেছেন, ‘মোকাব্বির খান ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গেলে বলেন, গেট আউট, আর বাসায় গেলে বলেন সংসদে যাও। এ ধরনের দ্বৈত নীতির দলে আমি থাকব না। এ আচরণে আমি ব্যথিত। এ দল আর আমি করব না।’ কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশন চলাকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে এ কথা বলেন পথিক।

সর্বশেষ খবর