রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুখবর নেই শ্রমবাজারে

প্রতিদিনই নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন প্রতারিত শ্রমিকরা

জুলকার নাইন

মধ্যপ্রাচ্যের রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য একমাত্র আশার আলো ছিল মালয়েশিয়া। চাকরির নিশ্চয়তা নিয়ে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে যেতে পারছিলেন বিদেশ গমনেচ্ছুরা। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তে সাত মাস ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এই শ্রমবাজার। দুই দেশের টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক হলেও আসছে শুধুই আশ্বাস। সর্বশেষ মালয়েশিয়া সরকার জানিয়েছে, বিদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি অনলাইন জব পোর্টাল খোলা হবে, যার মাধ্যমে সে দেশে নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু কবে নাগাদ চালু হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই কারোই। একই ধরনের হতাশা অন্য বন্ধ বাজারগুলোতেও। কোথাও থেকে আসছে না তেমন কোনো সুখবর। বরং প্রায়ই নিঃস্ব রিক্ত হয়ে ফিরতে হচ্ছে প্রতারিত শ্রমিকদের।

জনশক্তি বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে আস্থার প্রতীক ছিল উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত জিসিসির ছয়টি দেশ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভিসা জটিলতা, কূটনৈতিক ব্যর্থতাসহ নানা প্রতিকূলতায় ক্রমেই সংকুচিত হয়ে এসেছে এ শ্রমবাজার। ফলে প্রতি বছর কমছে জনশক্তি রপ্তানি। সৌদি আরবের নতুন আইন, নানা চেষ্টা সত্ত্বেও আরব আমিরাতের বন্ধ শ্রমবাজার খুলতে না পারা ভাবিয়ে তুলেছে প্রবাসীদের। এক সময় যে কুয়েত ছিল বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাজার, সেই বাজার এখন পুরোপুরি বন্ধ। লিবিয়ার দুয়ারও বন্ধ। ইরাকও প্রায় বন্ধের মতোই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোর দুয়ার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য এখন কার্যত বন্ধ। শেষে একমাত্র মালয়েশিয়ার বাজার ছিল চাঙ্গা। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতার নামে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির অহেতুক শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব, আরেক পক্ষের বাজার কুক্ষিগত রাখার ইচ্ছা প্রায় নষ্ট করে ফেলেছে এই শ্রমবাজারকে। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে যখন গতি বাড়ানো প্রয়োজন ছিল, তখন বায়রার দুই পক্ষের হানাহানিতে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিই বন্ধ হয়ে গেল।

সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে আরেক দফায় আশ্বাস পাওয়া গেছে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগেরানের কাছ থেকে। তিনি মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমকে বলেছেন, নতুন পোর্টালটি চালু হওয়ার পর যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যাটেগরিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবে। সরকারের নতুন প্রক্রিয়া চূড়ান্তকরণের দ্বারপ্রান্তে। কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন এই প্রক্রিয়াটি চালু হবে বলে মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রী। তবে কবে নাগাদ এই প্রক্রিয়া চালু হবে তা নিয়ে জানা নেই প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনেরও। হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, আলোচনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া সফরে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু যথাযথ সাড়া না পাওয়ায় সেই সফর সূচিও চূড়ান্ত করা যায়নি।

শ্রমিকদের ফিরতে হচ্ছে নিঃস্ব হয়ে : প্রায়ই প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরতে হচ্ছে শ্রমিকদের। নিঃস্ব রিক্ত হয়ে বৃহস্পতিবার ওমান থেকে ফেরত এসেছেন ১০৬ জন, কাতার থেকে ২৯ জন, মালদ্বীপ থেকে ১০ জন, সংযুক্ত আরব-আমিরাত থেকে পাঁচজন, আলজেরিয়া থেকে তিনজন, ফ্রান্স থেকে একজন। অন্যান্য আরও কয়েকটি দেশ থেকে এসেছেন ১০ জনসহ ১৬৪ জন পুরুষকর্মী ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৯ জন, ওমান থেকে পাঁচজন এবং লেবানন  থেকে দুজন নারীকর্মী। ফিরে আসা কর্মীরা জানান, নিয়োগকর্তা কর্তৃক নির্যাতন, বেতন না দেওয়া, কাজ না পাওয়া এবং বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও জোর করে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট  দেশগুলোর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের ধরে শূন্য হাতেই দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। ব্র্যাক মাইগ্রেশনার প্রোগ্রামের হেড শরিফুল হাসান বলেন, আমাদের অনেক অভিবাসী কর্মী খালি হাতে দেশে ফিরে আসছে প্রতিনিয়ত। ফিরে আসার পর তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। এখন পর্যন্ত আমরাই আড়াই হাজার জনকে জরুরি সহায়তা দিয়েছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর