রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

জামায়াতের সংস্কারপন্থিদের নতুন দল ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। ‘জন আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’ নামে, এর উদ্যোক্তারা মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাঁচটি কমিটিও গঠন করেছেন। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্যোগের আত্মপ্রকাশের কথা জানিয়ে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীসহ বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই।’ এর আগে ফেব্রুয়ারিতে জামায়াতে ইসলামীতে বিভক্তির অভিযোগ এনে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে জাতীয় জীবনের সব অর্জন ও ঐক্যের জায়গাগুলো সমন্বিত করে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি প্রস্তুত করা প্রয়োজন। প্রচলিত কোনো রাজনৈতিক ধারা বা দলের অনুসারী কিংবা অনুরক্ত নয়, এটা সম্পূর্ণ স্বাধীন উদ্যোগের একটি স্বতন্ত্র ধারা। রাজনৈতিক দল হবে সত্যিকার অর্থে ইনক্লুসিভ এবং একটি ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ার নতুন রাজনৈতিক কার্যক্রম এটি।’ এই রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা- জানতে চাইলে মঞ্জুু বলেন, ‘অনেকে এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ থাকার সন্দেহ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। কারও মদদ বা উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে আমরা আসিনি। অনেক বাধাবিপত্তি এসেছিল আমাদের ওপর। সামনেও আসবে, তার পরও আমরা এগিয়ে যাব।’ এই উদ্যোগের সঙ্গে ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের পদ ত্যাগকারী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। তবে আমরা দেশে-বিদেশে অনেকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি।’ কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে না উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের অনুপ্রেরণার উৎসস্থল ইসলামের উদার ঐতিহ্য ও সাম্যের দর্শন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত মূলনীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা।’ নতুন দলের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মঞ্জু বলেন, ‘আগামীতে আমরা সংগঠনের নাম, কাঠামো, কর্মপদ্ধতি ও লক্ষ্য চূড়ান্ত করব। সেই লক্ষ্যে পাঁচটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তা হলো রাজনৈতিক প্রস্তাবনার খসড়া কমিটি, জনসংযোগ ও অন্তর্ভুক্তি তত্ত্বাবধান, গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক, অর্থ সংগ্রহসংক্রান্ত প্রস্তাবনা এবং পরিকল্পনা, সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তাবনা, কর্মকৌশল এবং পরিকল্পনা কমিটি গঠন।’ মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শাসনামলেও দুবার গভীর সংকটকালে জাতিকে নতুন পথ দেখিয়েছিল মুসলিম লীগ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ। আর স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে হাল ধরেছিলেন জিয়াউর রহমান। প্রায় চার যুগ পরে আজ আবার প্রিয় মাতৃভূমি তেমন আরেক বাঁক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে। একাত্তরে যে আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেওয়ার দায়িত্ব বোধ করছি আমরা।’ জামায়াতের ভিতর সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অতীতে যেখানে ভূমিকা রাখতে চেয়েছিলাম সেখানে যখন নেই, সেই বিষয়ে কথা না-ই বলি। আমরা নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। অতীতের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কোনো তত্ত্বের কথা বলব না, অধিকারের কথা বলব।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মেজর আবদুল ওহাব মিনার (অব.), অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জুবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া, মাওলানা আবদুল কাদের, মাওলানা তাজুল ইসলাম, গোলাম ফারুক, গৌতম দাস, ড. কামাল উদ্দিন প্রমুখ। তবে মঞ্চে না থাকলেও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীর নাম ছিল।

সর্বশেষ খবর