রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোগী সেজে হাসপাতালে মাশরাফি, তোলপাড়

নড়াইল প্রতিনিধি

রোগী সেজে হাসপাতালে মাশরাফি, তোলপাড়

আগেভাগে কোনো খবর না দিয়ে রোগী সেজে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এরপর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে মাশরাফি কর্মরত ১৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র একজনকে কর্মস্থলে পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ ছাড়া ৭৩ জন নার্সের মধ্যে মাত্র দুজনকে কর্মস্থলে পেয়ে তার এ বিস্ময় ক্ষোভে রূপ নেয়। উল্লেখ্য, গত বুধবার দুই দিনের সফরে নড়াইলে আসেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন তিনি। এরপর বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। রোগীরা জানান, আকস্মিক হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে মাশরাফি বিন মর্তুজা প্রায় ২ ঘণ্টার মতো অবস্থান করেন। এ সময় তিনি নারী ও শিশু ওয়ার্ডের রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কাছ থেকে নানা সমস্যার কথা শোনেন। এরপর এ ব্যাপারে জানার জন্য চিকিৎসকের খোঁজ করলে পাওয়া যায় মাত্র একজনকে। ওই চিকিৎসক মাশারাফিকে জানান, চিকিৎসকদের ৩৯ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৫ জন। এর মধ্যে তিনি ছাড়া আর কেউ কর্মস্থলে নেই। হাসপাতাল সূত্র জানায়, এরপর মাশরাফি পুরুষ ওয়ার্ডে যান। সেখানে মাত্র দুজন নার্স দেখে বাকিদের ব্যাপারে খোঁজ লাগান তিনি। এপর্যায়ে জানতে পারেন, পর্যাপ্ত নার্স থাকলেও এই দুজন নার্স দিয়েই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এরপর দোতলা থেকে হাসপাতালের নিচতলায় নেমে আসেন মাশরাফি এবং নার্সিং সুপারভাইজারদের খোঁজ করেন। নার্সদের কক্ষে তালা দেখে নার্সিং সুপারভাইজারদের একজনের মোবাইল ফোনে কল দেন। কিন্তু তা বন্ধ পান। এরপর তিনি অপর একজন নার্সিং সুপারভাইজারের মোবাইল ফোনে কল দেন। তবে কলটি ধরেননি ওই নার্সিং সুপারভাইজার। রোগীরা জানান, তাদের অনুরোধে হাসপাতালের ওয়াসরুম দেখেন মাশরাফি। ওয়াসরুমের ভাঙা দরজা ও দুর্গন্ধে বিব্রতবোধ করেন তিনি। এরপর তিনি পুরো হাসপাতাল ঘুরে দেখেন এবং হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনার চিত্রগুলো ক্যামেরাবন্দী করেন। মাশরাফি ফের দোতলায় এসে ডাক্তারদের হাজিরা খাতা দেখেন। হাজিরা খাতায় সার্জারি চিকিৎসক ডা. আকরাম হোসেনের (সিনিয়র কনসালটেন্ট) তিন দিনের অনুপস্থিতি দেখে তার ছুটির আবেদন দেখতে চান। পরে জানতে পারেন, ছুটি ছাড়াই ওই ডাক্তার তিন দিন ধরে অনুপস্থিত। এ সময় রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করেন মাশরাফি। ওই চিকিৎসক মাশরাফিকে রবিবার হাসপাতালে আসতে বলেন। এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি ওই ডাক্তারকে বলেন, ‘এখন যদি হাসপাতালে সার্জারি প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই রোগী কী করবে?’ এরপর তিনি ওই ডাক্তারকে তার কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দেন। রোগীরা জানান, মাশরাফির হাসপাতালে আসার খবর পেয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমান বাবু ও ডা. আলিমুজ্জামান সেতু হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ সময় চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ক্ষুব্ধ মাশরাফি এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে নির্দেশ দেন, হাজিরা খাতায় চিকিৎসক আকরাম হোসেনকে তিন দিনের অনুপস্থিত উল্লেখ করতে। এরপর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুুস সাকুরকে তার কার্যালয়ে বসে ফোন করেন মাশরাফি। সাকুর জানান, খুলনায় একটি সভায় অংশগ্রহণ শেষে তিনি মাগুরায় বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। স্টেশনে নেমে শনিবার রাতের মধ্যেই আবদুস সাকুরকে হাসপাতালে চলে আসতে বলেন মাশরাফি।

তখন তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুস সাকুর এক ঘণ্টার মধ্যেই সদর হাসপাতালে চলে আসেন। হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ ও হাসপাতালের সামনে আবর্জনাভর্তি ড্রেন দেখে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের কাছে এর কারণ জানতে চান সংসদ সদস্য মাশরাফি। আবাসিক মেডিকেল অফিসার এর জন্য নড়াইল পৌরসভাকে দায়ী করেন। হাসপাতালের সংক্রামক ওয়ার্ডে গেলে রোগীরা নানা অভিযোগ করেন মাশরাফির কাছে। একজন রোগী জানান, বাইরে থেকে তাদের খাবার স্যালাইনটা পর্যন্ত কিনে আনতে হয়। এ অভিযোগ শুনে মাশরাফি হাসপাতালের বাইরের দোকানগুলোতে সরকারি স্যালাইন বিক্রি করা হয় কিনা তা দেখার জন্য একজনকে নির্দেশ দেন। হাসপাতালের ওষুধ সংকট জেনে স্টোর কিপারকে ডাকলে তিনি এর কারণ জানাতে পারেননি। মাশরাফির সদর হাসপাতাল পরিদর্শনের কথা জানাজানি হলে এ নিয়ে প্রশংসার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এসব ব্যাপারে গতকাল বিকালে নড়াইলের সিভিল সার্জন ড. মো. আসাদুজ্জামান মুন্সী বলেন, ‘সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন মাশরাফি। পরে রাতে বৈঠকও করেন। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের সাবধান করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর