সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ

মেয়েরা যেন বাবার সম্পত্তিতে পুরো ভাগ পায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিটি মানুষ যেন আদালতের কাছ থেকে ন্যায় বিচার পায় তার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা চাই প্রতিটি মানুষ ন্যায় বিচার পাক। আমরা যে রকম বিচার না পেয়ে কেঁদেছি, আর কাউকে যেন এভাবে না কাঁদতে হয়। মেয়েরা যেন বাবার সম্পত্তিতে পুরোপুরি ভাগ পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি অনুরোধ করেন। গতকাল সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েদের যে অধিকার সম্পদে, বাবা যে সম্পদ করে গেছেন, সেটা  কেন অন্যরা টেনে নিয়ে যাবে। শরিয়া আইনের  দোহাই দিয়ে সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে যাওয়ার একটা সুরাহা করা যায় কি না একটু দেখবেন।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সমাজের উচ্চবিত্তদের মধ্যে  বোনকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার প্রবণতা  বেশি বলে জানান। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে। আর কারাগারে অনেকে আছে, কী কারণে সে জেলে তাও জানে না। কীভাবে তারা আইনগত সহায়তা নিতে পারে, সেটাও তারা জানে না। সে বিষয়টাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, খুন, অগ্নিসন্ত্রাস, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা, ধর্ষণ নানা ধরনের অসামাজিক অনাচার চলছে। এগুলোর বিচার যেন খুব দ্রুত হয় এবং কঠোর শাস্তি হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও জট কমানোর লক্ষ্যে অধস্তন আদালতের জন্য বিচারক নিয়োগ ও নতুন আদালত ট্রাইব্যুনাল স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বিচার বিভাগে পৌঁছে দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছি।  ‘ভার্চুয়াল আদালতও করে দেব’-জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন,?অনেক সময় আসামি ছিনতাই হয়ে যায়। সে জন্য কেরানীগঞ্জ যে জেলখানা করেছি, সেখানে বসে যেন অনলাইনে বিচার করা যেতে পারে, সে ব্যবস্থা করে আমরা আদালত সৃষ্টি করেছি। পর্যায়ক্রমে আমরা তা জেলায়ও করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সংগ্রাম এবং ত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি। গণতন্ত্র না থাকলে আইনের শাসন যেমন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় না, তেমনি আইনের শাসন না থাকলে গণতন্ত্র টেকসই হয় না। আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশে এখন জমি-জমা সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাই বেশি। এগুলো আপস মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা গেলে মামলা জট কমবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যেক জেলায় স্থায়ী লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করেছি। বিজ্ঞ বিচারকগণকে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মামলার পূর্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের বিরোধ আপস-মীমাংসার মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রি-কেইস মেডিয়েশন বা মামলা পূর্ব বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা চালু করেছি। তিনি বলেন, বর্তমানে আদালতগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য মামলা দায়ের হওয়ায় মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে আপসযোগ্য মামলাগুলোও মধ্যস্থতার অভাবে দীর্ঘ সময়ের পর নিষ্পত্তি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে মামলা ও বিরোধ নিষ্পত্তিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতার মাধ্যমে আপসযোগ্য মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা গেলে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় ছাড়াই মানুষ প্রতিকার পেতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলার বিচার সাধারণ আদালতে হয়েছে। কিন্তু আমি বলেছি, সাধারণ আদালতে বিচার হবে এবং আদালত যে রায় দেবে, আমরা তা মেনে নেব। আমরা আদালতের রায় মেনে নিয়েছি। তিনি বলেন, অধস্তন আদালত ব্যবস্থাপনা শত্তিশালীকরণে আইন ও বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটিতে ৫৪০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৮৭ জন বিচারককে এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সহযোগিতায় উপকারভোগী হিসেবে মানিকগঞ্জ জেলার রিনা বেগম এবং কুমিল্লার নরুল ইসলাম নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

সর্বশেষ খবর