সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

রূপগঞ্জে শীর্ষ সন্ত্রাসী মিঠু অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে আটক

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

রূপগঞ্জে শীর্ষ সন্ত্রাসী মিঠু অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে আটক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ র‌্যাব-৩ এর সিপিসি-২ সদস্যদের হাতে আটক হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী মিঠু বাহিনীর প্রধান হুমায়ুন কবীর মিঠু। শনিবার বিকালে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কালনী বাজার এলাকা থেকে গুলি ও বিদেশি পিস্তলসহ ওই সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। রূপগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালতে পাঠায়। ম্যাজিস্ট্রেট তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হুমায়ুন কবীর মিঠু দাউদপুর ইউনিয়নের হিরনাল গোবিন্দপুর এলাকার তারাজ উদ্দিনের ছেলে। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, গতকাল সকালে হুমায়ুন কবির মিঠুকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। র‌্যাব-৩ সিপিসি-২ এর ডিএডি সুবেদার মো. সহিদ উল্লাহ জানান, ঢাকার হাতিরঝিল মধুবাগ এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের কালনী এলাকায় ডিসের ব্যবসার আড়ালে মিঠু সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরে রূপগঞ্জ থানার কালনী বাজারের মেসার্স পূর্বাচল ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক থেকে ওই সন্ত্রাসীকে একটি বিদেশি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলিসহ আটক করে। উল্লেখ্য, মিঠু বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, জমি দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। মিঠুকে গ্রেফতারে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। এলাকাবাসী জানায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী হুমায়ুন কবীর মিঠু ও তার সহযোগীরা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় দু-একজন নব্য নেতার আশীর্বাদে দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে এই মিঠু বাহিনী। ওই বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হলেও ভয়ে মামলা করা তো দূরের কথা, কেউ প্রতিবাদ করতেও সাহস পান না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিঠু বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কামরুল হাসান নয়ন, মোতাহার ফকির, হালিম মোল্লা, জামান, রেজু, শিবজন, লাল মিয়া। চাঁদা না পেয়ে গত সোমবার মিঠু তার দলবল নিয়ে মেরিন সিটির বালির পাইপ কেটে ফেলে। পুলিশ জানায়, এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে সন্ত্রাসী মিঠুকে একবার গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। এ ছাড়া গোবিন্দপুরের মহসিন হত্যা, বাগবেড় এলাকার মৌলভী হাসান আলীর হাত-পা ভেঙে দেওয়া, এলাকায় জমি বিক্রেতা ও পূর্বাচলের ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানোসহ বহু অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। মিঠুর ভয়ে স্থানীয় অনেক মানুষ এলাকাছাড়া। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নেশাখোর বাবার অত্যাচারে ১২ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে সাপুড়ে দলে যোগ দিয়ে সাপের খেলা দেখাত মিঠু। সেখান থেকে ফিরে ১৮ বছর বয়সে রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর দলে যোগ দেয় সে। এরপর মোহাম্মদ আলীর ছত্রচ্ছায়ায় থেকে মামাতো ভাই বেলায়েত হোসেনসহ বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। পরে সে মোহাম্মদ আলীর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার অংশীদার হয়। বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্ব মেনে নিতে না পেরে সুযোগমতো তাকে গুলি করে হত্যার পর পুরো দলের নেতৃত্ব নেয় মিঠু। নিজের প্রথম স্ত্রীকে হত্যার পর দ্বিতীয় বিয়ে করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ আলী মারা যাওয়ার পর মিঠু তার দলবলসহ কিছু দিন আত্মগোপনে থাকে। হুমায়ুন কবীর মিঠুর বিরুদ্ধে হাইওয়েতে তেলের ড্রামভর্তি ট্রাকে ডাকাতি, গরুবাহী ট্রাক থেকে গরু লুট, হাইওয়ে বাইপাসে বড় গাছ ফেলে গাড়িতে ডাকাতি, নিরীহ মানুষের বাড়িতে ডাকাতি, খুন, নারী ধর্ষণ, দেশি মদ তৈরি করে বিক্রি, ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর