মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাইড শেয়ারিং ভয়ঙ্কর

অদক্ষ চালক নিয়ম-নীতি মানতে উদাসীন, অনেকে মাদকাসক্ত, দুর্ঘটনায় বাড়ছে প্রাণহানি, যাত্রী নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে

জুলকার নাইন

রাইড শেয়ারিং ভয়ঙ্কর

অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে জনপ্রিয় হয়েছিল রাইড শেয়ারিং। তবে অল্প দিনের মধ্যেই সমাজে ভীতিও তৈরি করছে। অল্প দিনের ব্যবধানে বেশকিছু মারাত্মক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও নিয়মনীতি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতাই রাইড শেয়ারিংয়ের এই পরিণতির কারণ। ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্যের করুণ মৃত্যু নিয়ে আলোচনার মাঝেই গতকাল চট্টগ্রামে উবারচালিত গাড়িতে দুই দফা ধর্ষণের শিকার ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীর লজ্জায় আত্মহত্যার তথ্য জানা গেল। বাদশা নামের এক উবারচালক পুলিশের হাতে আটকের পর আদালতে এসব তথ্য জানিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। অবশ্য মোটরবাইকের ক্ষেত্রে হাজারো অদক্ষ চালক পুরো প্রক্রিয়াকেই ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। এমনিতেই রাইড শেয়ারিং চালুর পর থেকেই পিপীলিকার মতো মোটরবাইক বাড়তে থাকে ঢাকা মহানগরীতে। এখন অবস্থা এমন যে অদক্ষ কিছু বাইকার রাইড শেয়ারিং করতে গিয়ে অন্যসব যানবাহনকে ফেলে দিচ্ছে বিপাকে। তাদের যেমন খুশি তেমন চলা তছনছ করে দিচ্ছে ট্রাফিক-শৃঙ্খলা। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বহীনতা, ভুয়া আইডি ও ভুয়া ঠিকানার ছড়াছড়ি। এতে যাত্রীদের নিরাপত্তাও পড়েছে প্রশ্নের মুখে। কাভার্ড ভ্যান চাপায় ব্র্যাক শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্যের মৃত্যুর পর রাইড শেয়ারিংয়ের এত দিনের সব অনিয়ম সামনে এসেছে। লাবণ্যকে বহনকারী উবারে রেজিস্ট্রেশনের সময় মোটরসাইকেল চালক সুমন হোসেন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও বিকাশ অ্যাকাউন্টের ঠিকানাও ভুয়া। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া সুমনের ভুল ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন করেছে উবার কর্তৃপক্ষ; যার ফলে লাবণ্যের মৃত্যুর ঘটনায় সুমনকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে। উবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৪১টি। গত বছরই হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৪টি। সংশ্লিষ্টদের মতে, অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের কারণেই মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। এখন ঢাকায় উবার মটো, পাঠাও, ও ভাই, ও বোন, সহজ, স্যাম, চলো, ইজিয়ার, পিকমি, আমার বাইক, সহজ রাইডার্স, বাহন, আমার রাইড, ঢাকা রাইডার্স, ঢাকা মটোসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারের সুবিধা দিচ্ছে। যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসীর জন্য রাইড শেয়ারিং ছিল স্বস্তির বাতাস। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের বাঁধাধরা জীবনের বাইরে চলার স্বাধীনতা ও দ্রুততা পেয়েছিল নগরবাসী। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নতমানের অ্যাপস তৈরিতে নানা ফিচার সংযোজন করে। একই সঙ্গে যাত্রী ও চালককে আকৃষ্ট করতে চলে প্রতিযোগিতা। বর্তমানে রাইড শেয়ারিংয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ চালক ঢাকার বাইরে থেকে এসে কর্মসংস্থানের তাগিদে চালকের দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ আবার ধারদেনায় বা লোনের মাধ্যমে মোটরযান কিনে রাইড শেয়ারকে পেশায় পরিণত করেছেন। ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িগুলো শুধু কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়া সময় দুবার রাইড শেয়ার করে। এর সংখ্যা তুলনামূলক নগণ্য। এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স টোকেন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ইনস্যুরেন্সের কাগজ ঠিক থাকলেই একজন মোটরসাইকেল চালকের অ্যাকাউন্ট ওপেন করা হয়। এ ক্ষেত্রে চালকের ড্রাইভিং স্কিল, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা, তিনি আরোহী বহনে সক্ষম কিনা এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয় না। পাশাপাশি একজন বাইকচালক ঢাকা শহরে ট্রাফিক নিয়ম মেনে বাইক চালাতে সক্ষম কিনা, তাও দেখা হয় না। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, ‘রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই চালকদের অনুমতি দিচ্ছে। এসব চালক দক্ষ নন, বরং মাদকসেবী কেউ কেউ। নারীদের বাইকে তুলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হঠাৎ হঠাৎ বাইকে ব্রেক ধরেন। এগুলো মনিটরিং করে না রাইড ও শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। তাদের আরোহীদের জন্য নিম্নমানের হেলমেট দেওয়া হয়। এসব অনিয়ম-দুর্বলতা দ্রুত ঠিক করতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর