মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

শেয়ারবাজারে গণঅনশন, যোগ দিলেন মেননও

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে ও স্থিতিশীলতার দাবিতে এবার গণঅনশন করেছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে প্রতীক অনশন কর্মসূচি পালিত হয়। এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান। এ সময় তিনি আগামী বাজেটের আগেই শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতার জন্য অর্থমন্ত্রীকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি জুনের আগেই প্রণোদন ঘোষণার দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। জানা গেছে, মাসব্যাপী অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে প্রতিদিন বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতায় সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় তারা। গতকাল সকাল ১১টায় ডিএসইর সামনে কয়েকশ বিনিয়োগকারী রাস্তায় বসে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় তারা ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেন। পরে বেলা আড়াইটার দিকে অনশনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশন কর্মসূচিতে আসেন রাশেদ খান মেনন এমপি। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হবে। এই প্রণোদনা কী হবে সেটা যদি বিস্তারিত বলেন তাহলে ভালো। ১৩ জুন বাজেট আসবে, আশা করি বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কী প্রণোদনা ও কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। তিনি বলেন, আইন লঙ্ঘন করে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী বাজেটের আগেই আমরা বিএসইসিতে পরিবর্তন দেখতে চাই। মেনন বলেন, সংসদে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন পুঁজিবাজারে সংকট আছে। সেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে না পারলে আমাদের শিল্প, বাণিজ্য কোনোটাই হবে না। কারণ পুঁজিবাজার থেকেই অর্থ সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু শুধু কথা বলেই শেষ হবে না। বাজার স্থিতিশীলতার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী অধিকতর তদন্তের পদক্ষেপ নিন। অনেক প্রথিতযশা ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ আছেন। যারা এই অধিকতর তদন্ত করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। গত ১০ বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা থেকে ঋণ খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি কমানোর কথা বলে নতুন পদ্ধতি ঘোষণা করা হয়েছে। ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেবেন, ৯ শতাংশ সুদ দেবেন, আর ১২ বছরে ঋণ পরিশোধ করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে দরকার হলে আরও ৬ মাস বাড়িয়ে দেওয়া হবে। যারা ঋণ নেন বা সাধারণ ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা তারা কোথায় যাবেন? আপনি ঋণ খেলাপি হয়ে ৯ শতাংশ সুদ দেবেন। আর আমি ভালো ঋণগ্রহীতা হয়ে ১৩ শতাংশ সুদ দেব- এটা কি হয়? আপনি ঋণ খেলাপি হয়ে ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেবেন, আর আমি ভালো ঋণগ্রহীতা হয়ে ১০-১২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেব- এটা কি হয়? তাহলে আমরা সবাই এখন ঋণ নিয়ে খেলাপি হব।’ এদিকে অব্যাহত পতনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে। ডিএসইর সূচক ২ বছর ৩ মাস ২১ দিন বা ৫৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম স্থানে অবস্থান করছে। এর আগে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারির পর এটা সর্বনিম্ন।

ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকার। যা আগের দিন থেকে ৪৬ কোটি টাকা কমেছে। ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৮৬টির বা ২৫ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ২১৭টির বা ৬২ শতাংশের এবং শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টির বা ১৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮৬৯ পয়েন্টে।

সর্বশেষ খবর