শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিএনপির বিভাজন কীভাবে কাটবে কেউ জানে না

চার এমপির শপথ নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে
কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত

মাহমুদ আজহার

বিএনপির বিভাজন কীভাবে কাটবে কেউ জানে না

চার এমপির শপথের পর গত বৃহস্পতিবার বিএনপির তিন সিনিয়র নেতা গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে এক নেতা আরেক নেতাকে বলেন, শপথকে ঘিরে তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের মনের মধ্যে এখন যা অবস্থা, তাতে আমাদের রাজনীতিই প্রশ্নবিদ্ধ। নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, চার এমপির শপথের মধ্য দিয়ে বেগম জিয়া শিগগিরই মুক্তি পাবেন। এটা যদি না হয়, তাহলে আমরা কেউই রেহাই পাব না। দলের বিভাজন কেউ ঠেকাতে পারবে না। কার্যত, চার এমপির শপথ গ্রহণের পর বিএনপিতে বিভাজন স্পষ্ট হয়েছে। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এ নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত। বড় অংশই শপথের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ বিএনপির হাইকমান্ডই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে। এ বিভাজন কীভাবে কাটবে কেউ জানে না। আজ দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।

জানা যায়, চার এমপির শপথে বিএনপি নেতা-কর্মীর বড় অংশই ক্ষুব্ধ। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে শপথের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও হতবাক ও বিস্মিত হন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের কাছে এ নিয়ে ব্যাখ্যা চাইবেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। গতকাল এক অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিজেই ব্যাখ্যা চাওয়ার কথা বলেছেন।

চার এমপির শপথে বিএনপিতে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির চার এমপি শপথ নিয়েছেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন আছে। তবে তারা দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ নিয়েছেন। শিগগিরই সব ঠিক হয়ে যাবে। এখানে দলীয় কোনো বিভাজনের সুযোগ নেই।’ সূত্রমতে, চারজনের শপথকে ঘিরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে বিভাজনের সৃষ্টি হয়। এ শপথ না হলে বিএনপি ভেঙে যাওয়ার শঙ্কাও ছিল। ওই এমপিদের নিয়ে নতুন বিএনপি ঘোষণার প্রস্তুতিও ছিল শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের। তা ছাড়া শপথের সঙ্গে বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি জুড়ে দেন এমপিরা। এসব বিবেচনায় দলের ভাঙন ঠেকাতেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। এ ক্ষেত্রে তিনি দলের মহাসচিব ছাড়া বিষয়টি গোপন রাখেন। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা না জানায় বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে হতাশার সৃষ্টি হয় তৃণমূলেও। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সংসদে যোগদানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির সম্পর্ক আছে কিনা আমি জানি না। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের আগে জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বাকিরা দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ নিয়েছেন। আমাদের সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক না বেঠিক, এজন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ নিয়ে আমাদের সবাইকে এক সুরে কথা বলতে হবে।’ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির চার এমপি শপথ নেওয়ায় তৃণমূলের রাজনীতিতে ভুল বার্তা যায়। হতাশ হন মাঠ পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এখন আর জোর গলায় বলা যাবে না এ সরকার ও সংসদ অবৈধ। ৩০ ডিসেম্বর যে ভোট কারচুপি হয়েছে, তার উদাহরণও তুলে ধরা যাবে না। বিএনপির হাইকমান্ড যদি এ সিদ্ধান্তই নেবেন, তা দলীয় ফোরামে তোলা উচিত ছিল। এটা নীচমানের রাজনীতি হলো। বেশ কিছুদিন পর বিএনপি আবারও ভুল রাজনীতিতে পা দিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ওই পরিস্থিতিতে তারেক রহমান এমপিদের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নিলে দলের ভিতর বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসত। এতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকত সরকার। বিএনপির এ দুর্বলতাকে সরকার কাজে লাগানোর চেষ্টা করত। বিএনপির মূল রাজনৈতিক ধারা দুর্বল হয়ে পড়ত। এজন্য স্থায়ী কমিটি তৎক্ষণাৎ বিষয়টি না জানলেও তারেক রহমান পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছেন এটাই বড় কথা। বিষয়টি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বুঝিয়ে বলা হবে। বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের পাঁচজন কেন যদি ১০ জনও শপথ নেন, তবু এ সংসদের বৈধতা আসবে না। আর বিএনপি একটি সমুদ্র। সেখান থেকে দু-চার জন চলে গেলেও এ দলের কিছু হবে না। এমনকি জিয়া পরিবারের বাইরে যদি দলের নেতাদের বড় অংশই বিএনপির সঙ্গে গাদ্দারি করে তাতেও কিছু হবে না। লাখো-কোটি কর্মী-সমর্থকই জিয়ার আদর্শ সমুন্নত রাখবে। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল শপথ না নিয়ে নেতা-কর্মীদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন বলে আমি মনে করি।’

সর্বশেষ খবর