রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফণীর বিষে নীল উড়িষ্যা

প্রতিদিন ডেস্ক

ফণীর বিষে নীল উড়িষ্যা

উড়িষ্যার পুরীতে বিধ্বস্ত ঘরের পাশে নারীর আর্তনাদ -এএফপি

ফণীর ছোবলে ভারতের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উড়িষ্যায় মোট ১৬ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এই সঙ্গে ল-ভ- হয়ে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, ভবন। অবশ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এ ক্ষয়ক্ষতির পরও স্বস্তি প্রকাশ করেছে। এই সঙ্গে গতকাল প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদপত্রগুলোও উল্লেখ করেছে, ভয়াল ফণীর কারণে শুধু উড়িষ্যায় ১৬ জনের প্রাণহানি, বহু ঘরবাড়ি, ভবন বিধ্বস্ত হলেও অন্যান্য স্থানে নয়জনের মৃত্যু ছাড়া  তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এর মূল কারণ, আগাম সতর্কতা ও জনসচেতনতা। এজন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জাতিসংঘও প্রশংসা করেছে। সূত্র : আনন্দবাজার, আজকাল, চব্বিশ ঘণ্টা, গণশক্তি, উত্তরবঙ্গ সংবাদ, প্রতিদিন।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, সঠিক সময়ে সাইক্লোন ফণীর গতিবিধি ধরতে পারায় কমানো গেছে প্রাণহানির সংখ্যা। ঘণ্টায় প্রায় ১৭০ কিলোমিটার বেগে ফণী আছড়ে পড়ে উড়িষ্যার উপকূলে। ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো না গেলেও ‘এক্সট্রিমলি সেভার সাইক্লোন’ ফণীতে তুলনামূলক মৃত্যুর সংখ্যা কমানো গেছে। এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর থেকে স্থানীয় প্রশাসন। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সেক্রিটারি জেনারেলের ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশনের প্রধান মামি মিজুতোরি বলেন, ‘ফণীর গতিবিধির সুনির্দিষ্ট আগাম পূর্বাভাস করায় প্রাণহানি কমানো গেছে।’ এজন্য আবহাওয়া দফতর, স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতার প্রশংসা করছে জাতিসংঘ। বলা হয়, ঝড়ের পূর্বাভাস মিলতেই কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় ১২ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়। উড়িষ্যার উপকূলে প্রায় ২.৮০ কোটি মানুষ বসবাস করে। ৪ হাজার পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে আনার পাশাপাশি, স্কুল, কলেজ, অফিসও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও শুক্রবার দিনভর ফণীর তা বে প্রাথমিক খবর অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ছিল ৯-এ। পরে আরও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এর বাইরে পুরীতে মৃত্যু হয় তিজনের। আরও তিনজনের মৃত্যু হয় ভুবনেশ্বরে। নয়াগড় ও কেন্দ্রপায়ায় মৃত্যু হয় আরও তিনজনের। অথচ ১৯৯৯ সালে সাইক্লোনে উড়িষ্যায়ই মৃত্যু হয়েছিল কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের।

গতকাল উড়িষ্যার মেদিনীপুরে সরকারি আমলা আশিস সাংবাদিকদের বলেন, ‘১ মে নবান্ন থেকে আমরা ফণীসংক্রান্ত সতর্কবার্তা পেয়ে যাই। ফলে আমরা দুটো গোটা দিন হাতে পাই, পরিস্থিতি মোকাবিলা করার, প্রস্তুতি নেওয়ার।’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসক পার্থ ঘোষও ফুল মার্কস দিয়েছেন দেশের আবহাওয়া দফতরকে। তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকে সতর্কবার্তার পাশাপাশি সাইক্লোনের গতিবিধি ও চরিত্র জানিয়ে দিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফণী নিয়ে আপডেট দিয়েছে। তার ফলে একদিকে যেমন প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাওয়া গেছে, সেই সঙ্গে পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত পরিকল্পনা করাও সম্ভব হয়েছে।’ আবহাওয়া দফতরের পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যের মাইক্রো প্ল্যানিংকেও সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি বলে মনে করেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৯৯ সালে উড়িষ্যার সুপার সাইক্লোন কিংবা এ রাজ্যে ২০০৯-এর আইলা যা করতে পেরেছিল, ধারে-ভারে তার চেয়ে কম না হয়েও ততটা দাঁত ফোটাতে পারল না ফণী। প্রাণহানি নামমাত্র। বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতিও তুলনায় অনেক কম। আর এর প্রধান কারণ আবহবিদ্যায় কার্যত বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর