রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

উপজেলায় বিদ্রোহীদের ইন্ধনদাতা এমপি-মন্ত্রীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

সিদ্ধান্ত হলেও শোকজ পাঠানো হয়নি কাউকে

রফিকুল ইসলাম রনি

উপজেলা নির্বাচনে নৌকাবিরোধী এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দলীয় সিদ্ধান্তের এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই। কাউকে শোকজ নোটিস পাঠানো দূরে থাক, এখন পর্যন্ত চিহ্নিতই করা হয়নি নৌকা ডুবানো ব্যক্তিদের। কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, আপাতত ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছেন উপজেলায় বিদ্রোহীদের ইন্ধনদাতা এমপি-মন্ত্রীরা। দলীয় শৃঙ্খলা-ভঙ্গের অভিযোগে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা’ না নিয়ে আরও তদন্ত করে ধীরে ধীরে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তাদের আমলনামা সাজিয়ে রাখা হচ্ছে।   

গত ২৯ মার্চ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে নৌকাবিরোধী এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের  চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে নির্দেশ দেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবার ৫ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিদ্রোহীদের পক্ষে যারা কাজ করেছেন তাদের শোকজ পাঠানো হবে। জানা যায়, বিএনপিবিহীন উপজেলা নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে প্রথমে নমনীয় ছিল আওয়ামী লীগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আত্মঘাতী রূপে অবতীর্ণ হন দলের অর্ধশত এমপি ও নেতা। তারা নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘নিজস্ব’ প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। শুধু নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করানোই নয়, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে থাকা নেতা-কর্মীকেও নানাভাবে হয়রানি করেছেন ওইসব এমপি-মন্ত্রী ও নেতা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপ ও প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব জরিপে ৫৫ জন এমপি-মন্ত্রী ও নেতার নাম উঠে এসেছে। দলীয় সভানেত্রীর হুঁশিয়ারি এবং শোকজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলেও এখনো কাউকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। গত এক মাসেও নৌকার বিরোধীদের চিহ্নিত করে তৈরি করা হয়নি সাংগঠনিক প্রতিবেদন। দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা এ প্রতিবেদন তৈরি করার কথা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা জেলা নেতাদের কাছে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সার্বিক প্রতিবেদন চেয়েছি। প্রতিবেদনটি হাতে পাওয়ার পর বিচার-বিশ্লেষণ করে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাব, তাদের নোটিস করা হবে। দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫৫ জন এমপি-মন্ত্রী ও নেতা সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা দলের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হয়ে ও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার তিন মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই দলীয় নির্দেশ অমান্য করেন। তাদের এমন কান্ডে আওয়ামী লীগকে সমালোচনার শিকার হতে হয়। ‘বাড়াবাড়ি ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে তারা নৌকার মূল প্রার্থীর পরাজয়ে নানা তৎপরতা চালান বলে তৃণমূল থেকে অভিযোগ আসে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। তাদের কারণে অনেক উপজেলায় নৌকার প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, উপজেলা নির্বাচনে নৌকাবিরোধী এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত থাকলেও আপাতত তা হচ্ছে না। কারণ হিসেবে বিএনপিবিহীন নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং ‘অনেকটা উন্মুক্ত’ রাখার কারণে সিদ্ধান্ত শিথিল করা হচ্ছে। তারা বলছেন, এটাই হয়তো শেষ সুযোগ। ভবিষ্যতে নৌকার বিরোধিতা সহ্য করা হবে না। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যারা বিদ্রোহীদের পক্ষে সরাসরি কাজ করেছে বা ইন্ধন দিয়েছেন তাদের ব্যাপারে আমাদের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদন দেবেন। সেই তথ্যের আলোকে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এখনো কারও সম্পর্কে এমন কোনো প্রতিবেদন হাতে পাননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর