রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

লাখনৌ-আমেথি-রায়বেরিলি আসন ঘিরে যত কৌতূহল

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

লাখনৌ-আমেথি-রায়বেরিলি আসন ঘিরে যত কৌতূহল

ভারতজুড়ে চলমান সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে পঞ্চম পর্বের ভোট গ্রহণ করা হবে আগামীকাল ৬ মে। এদিন সাতটি রাজ্যের ৫১টি লোকসভা আসনে ভোট হবে। আসনগুলো হলো- উত্তর প্রদেশ ১৪, রাজস্থান ১২, মধ্য প্রদেশ ৭, পশ্চিমবঙ্গ ৬, বিহার ৫, ঝাড়খ  ৪ এবং জম্মু-কাশ্মীরের ২টি। তবে মানুষের বেশি কৌতূহল ৩টি আসনের দিকেই বেশি। এগুলো হচ্ছে- লাখনৌ, আমেথি, রায়রেবিলি।

এ পর্বে মোট ভোটারের সংখ্যা ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৮৮ হাজার ৭২২। প্রার্থী ৬৭৪ জন।

পঞ্চম পর্বে বেশ কয়েকটি হিন্দিভাষী অধ্যুষিত এলাকায় ভোট নেওয়া হবে, যেখানে মূল লড়াই হতে চলেছে বিজেপি ও জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে। এর মধ্যে সবার প্রথমে রয়েছে উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি আসন। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এ আসনে একটা সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী। ২০০৪ সাল থেকে মোট চারবার এ আসনে জিতে আসছেন সোনিয়া গান্ধী। শেষবার ২০১৪ সালে এ আসনে বিজেপি প্রার্থী অজয় আগরওয়ালকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ভোটে হারিয়েছিলেন সোনিয়া। এবার তার প্রধান প্রতিপক্ষ সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দীনেশ প্রতাপ সিং। সপা-বসপা জোট প্রার্থী না দেওয়ায় এবার রায়বেরিলি আসনে কংগ্রেস ও বিজেপির দ্বিমুখী লড়াই হতে চলেছে। তবে শারীরিক কারণেই চলমান লোকসভা নির্বাচনে ৭২ বছর বয়স্ক সোনিয়া এ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হবেন কিনা তা নিয়ে একটা জল্পনা ছিল। শোনা গিয়েছিল তিনি হয়তো এবার রাজনীতিতে সন্ন্যাস নেবেন এবং সেই জায়গায় তার কন্যা প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করা হতে পারে। তেমন কিছুই হয়নি। রায়বেরিলিতে ১৯৫৭ সাল থেকে মোট ১৯ বার জিতেছে কংগ্রেস। ১৯৭৭, ’৯৬ ও ’৯৮ সাল- কেবল এ তিনটি বারই এ কেন্দ্রে কংগ্রেসকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল। জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ’৭৭ সালে এ আসনে হারিয়ে দেন ভারতীয় লোকদল প্রার্থী রাজনারায়ণ। আর ’৯৬ ও ’৯৮ সালে বিজেপি প্রার্থী অশোক কুমার জয় পান। অতীতেও এ আসন থেকেই ইন্দিরা গান্ধী, তার স্বামী ফিরোজ গান্ধী, অরুণ নেহেরুর মতো নেতারা লড়াই করেছিলেন।

উত্তর প্রদেশের আরেকটি আসনের দিকেও নজর থাকবে। সেটি হলো ‘আমেথি’। এ আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী। বিপক্ষ দল বিজেপির প্রার্থীও নেহাৎ কম হেভিওয়েট নন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।

রায়বেরিলির মতো আমেথি আসনও কংগ্রেসের ঘর বলে পরিচিত। ১৯৮০ সাল থেকেই এ আসনটি নিজেদের দখলে রেখেছে কংগ্রেস। তবে ১৯৯৮-৯৯ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এ আসনটি কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। এ আসনে শেষ তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন রাহুল। ২০১৪ সালে আমেথিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্মৃতি ইরানি। কিন্তু প্রবল মোদি হাওয়ার মধ্যেও রাহুলের কাছে প্রায় ১ লাখ ভোটে হেরে যান স্মৃতি। ২০০৯ সালে এ কেন্দ্র থেকেই ২.৭০ লাখ ভোটে জয় পান রাহুল। তবে এবারের লড়াইটা বেশ শক্ত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাহুলের আগে এ আসনে লড়াই করেছিলেন তার পিতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধী এবং কাকা সঞ্জয় গান্ধী। রায়বেরিলির মতো আমেথি আসনেও সপা-বসপা-রাষ্ট্রীয় লোকদলের জোট তাদের প্রার্থী দেয়নি। তাই লড়াইটা সীমাবদ্ধ থাকবে কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যেই।

উত্তর প্রদেশেরই আরেকটি আসন লাখনৌ। এ আসনে বর্তমান এমপি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবারও বিজেপির প্রার্থী। রাজনাথের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী পুনম সিনহা (শত্রুঘ্ন সিনহার স্ত্রী) এবং কংগ্রেসের প্রমোদ কৃষ্ণম।

১৯৯১ সাল থেকে এ আসন বিজেপির দখলে। এ আসনে পরপর পাঁচবার জিতে এমপি হয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি।

রাজনাথ সিংও চার দশক ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম বিধায়ক হন। ’৯৪ সালে রাজ্যসভার সদস্য হন। ২০০০-২০০২ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০৩-২০০৪ পর্যন্ত বাজপেয়ি সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন রাজনাথ। ২০১৩-১৪ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এ আসনে ধারে ও ভারে অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে রাজনাথ সিং। অন্যদিকে এবারই প্রথম প্রার্থী হয়েছেন পুনম, আর ২০১৪ সালে সম্বল কেন্দ্রের পরাজিত প্রার্থী হলেন প্রমোদ।

ঝাড়খে র ‘হাজারিবাগ’ আসনে বিজেপির টিকিটে লড়াই করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের গোপাল সাহু ও সিপিআই প্রার্থী ভুবনেশ্বর প্রসাদ মেহতা।

রাজস্থানের ‘বিকানের’ আসনে এবার সরাসরি বিজেপি ও কংগ্রেসের লড়াই হতে চলেছে, যা চলে আসছে ১৯৮০ সাল থেকে। এ আসনে বর্তমান এমপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। ২০১৪ সালে তিনি ৩ লাখের বেশি ভোটে জয় পেয়েছিলেন। এবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী নিজের চাচাতো ভাই সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা কংগ্রেসের মদন গোপাল মেঘওয়াল।

মধ্য প্রদেশের সাতনা লোকসভা আসনেও এবার মূল লড়াই কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। ২০ বছর ধরে এ আসনটি বিজেপির দখলে। এবারে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি গণেশ সিং, ২০০৪ সাল থেকে তিনি এ আসনে লড়াই করে আসছেন। যদিও ২০০৯ ও ২০১৪ সালে যথাক্রমে মাত্র ৪০০০ ও ৮০০০ ভোটে জয় পেয়েছিলেন গণেশ।

৬ মের নির্বাচনে নজর থাকবে জম্মু-কাশ্মীরের ‘লাদাখ’ আসনটির দিকেও। ভৌগোলিকগতভাবে ভারতের সবচেয়ে বড় লোকসভা আসন এলাকা এই লাদাখ। ২০১৪ সালে এ আসনে স্বতন্ত্র পার্থী গুলাম রাজাকে মাত্র ৩৬ ভোটে হারিয়ে জয় পান বিজেপির থুপসান চেওয়াং; যেটা লোকসভার নির্বাচনের নিরিখে এক অনন্য নজির। কিন্তু গত বছর বিজেপি ও সংসদ- উভয় জায়গা থেকেই চেওয়াং ইস্তফা দেওয়ায় এবার ওই কেন্দ্রটিতে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে চলেছে গেরুয়া শিবির। এবার এ আসনে চতুর্মুখী লড়াই হতে চলেছে। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন জামইয়াং সেরিং নামগিল, কংগ্রেসের রিগজিন স্পালবার, স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী আসগার আলি কারবালাই ও সাজ্জাদ কারগিলি। এবার পিডিপি বা ন্যাশনাল কনফারেন্স- কেউই তাদের প্রার্থী দেয়নি, তারা সাজ্জাদকে বাইরে থেকে সমর্থন করছে।

৬ মে পশ্চিমবঙ্গের যে সাতটি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে সেগুলো হলো- বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, হুগলী, শ্রীরামপুর ও আরামবাগ।

সর্বশেষ খবর