সোমবার, ৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

সক্ষমতা থাকলেও বিমান ওড়ে না দূরপাল্লায়

কাজে লাগাচ্ছে না ঢাকা দিল্লি ও ঢাকা লল্ডন ফ্লাইটে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সক্ষমতা থাকলেও বিমান ওড়ে না দূরপাল্লায়

দূরপাল্লায় উড্ডয়নের সক্ষমতা এবং যাত্রী চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ বিমান। রুট নির্ধারণে পরিকল্পনার অভাব ও অদূরদর্শিতায় ভুগতে হচ্ছে সরকারি এই রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাটিকে।   

ঢাকা-দিল্লি, ঢাকা-লন্ডন এবং ইউরোপের রুটগুলোতে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা কাজে লাগাচ্ছে না বিমান কর্তৃপক্ষ। তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ক্যাটাগরির উন্নয়ন না হওয়া বিমানের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

গত ১০ মার্চ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জাতীয় সংসদে জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ৫৩টি দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। বর্তমানে ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ১২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বিমান। এর মধ্যে সপ্তাহে কলকাতায় ১৪টি, কাঠমান্ডুতে ৭টি, ইয়াঙ্গুনে ৪টি, কুয়ালালামপুরে ১৪টি, সিঙ্গাপুরে ১২টি, ব্যাংককে ৭টি, লন্ডনে ৪টি, দোহায় ৪টি, দুবাইয়ে ৭টি, কুয়েতে ৭টি, দাম্মামে ৭টি, রিয়াদে ৭টি, জেদ্দায় ১০টি, মাসকাটে ৭টি এবং আবুধাবিতে ৭টি ফ্লাইট চলছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট না থাকায় যাত্রীদের বিদেশি এয়ারলাইনসের ওপর নির্ভর করতে হয়। বিদেশি বড় এয়ারলাইনসগুলো দূরপাল্লার গন্তব্যে বাংলাদেশের যাত্রী পরিবহনের বাজার পুরোপুরি দখলে নিয়েছে। বিমান বহরে দীর্ঘক্ষণ উড়তে সক্ষম উড়োজাহাজ থাকলেও লন্ডন ছাড়া ইউরোপ, আমেরিকার কোথাও বিমানের ফ্লাইট নেই। এসব রুটে যাত্রী পরিবহনে একচেটিয়া ব্যবসা করছে বিদেশি এয়ারলাইনস। ঢাকা-লন্ডন রুটে টিকিটের জন্য যাত্রীদের হাহাকার থাকলেও তিন মাস আগে থেকেই মিলছে না টিকিট। সপ্তাহে মাত্র ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অথচ এই রুটে প্রতিদিন দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করার মতো যাত্রী চাহিদা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢাকা থেকে ইউরোপগামী যাত্রীদের ট্রানজিট পয়েন্ট হতে পারে লন্ডন। কারণ লন্ডন থেকে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে যেতে সময় লাগে এক-দেড় ঘণ্টা। এখান থেকে নিউইয়র্কের জে এফ কে বিমানবন্দরে পৌঁছানো সম্ভব ছয় ঘণ্টাতে। তাই এই রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশ বিমান ইউরোপের বাজার ধরতে পারে বলে মনে করছেন তারা। একইভাবে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ রয়েছে ঢাকা-দিল্লি রুটে। এক সময় বিমান ও এয়ার ইন্ডিয়া দুই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাই ঢাকা-দিল্লির মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করত। যদিও বেশ কয়েক বছর আগে তা বন্ধ হয়ে গেছে। আর এই সুযোগে গত কয়েক বছর দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই রুটটিতে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে ভারতের জেট এয়ার। জরুরি প্রয়োজনে কিংবা চিকিৎসার জন্য ঢাকা-দিল্লি যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল জেট এয়ারওয়েজ। গত মাসে বন্ধ হয়ে যায় একমাত্র সার্ভিসটিও। ফলে কলকাতা ঘুরে দিল্লি যেতে হচ্ছে ঢাকার যাত্রীদের। ভারতে মেডিকেল ট্যুরিজমের সুবাদে ঢাকা-দিল্লি রুটে প্রতিদিন একাধিক ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তারা জানান, অতীতে বাংলাদেশ বিমানসহ একাধিক এয়ারলাইনস ঢাকা-দিল্লি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এ সময় তাদের ব্যবসাও ভালো ছিল। এই রুটে বিমান রমরমা ব্যবসা করত। এক সময় সেটা বন্ধ হয়ে যায়। আবার ২০১৩ সালের ২৩ মে এ রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু হয়। একটি ৭৩৭ বোয়িং উড়োজাহাজ দিয়ে সপ্তাহে দুটো ফ্লাইট অপারেট হতো। ঢাকা-দিল্লি-ঢাকার ভাড়া ছিল ২২ হাজার ৪০০ টাকা। যাত্রী চাহিদাও ছিল প্রচুর। হঠাৎ এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের জুনে লোকসানের অজুহাতে বিমানের দিল্লি ফ্লাইট স্থগিত করে দেয়।

এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ঢাকা-দিল্লি রুটে বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে এই রুটে সরাসরি যাতায়াতকারী জেট এয়ারওয়েজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের কলকাতা ঘুরে দিল্লি যেতে হচ্ছে। যাত্রীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় আমরা ১৩ মে থেকে ঢাকা-দিল্লি রুটে সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করব। পরে ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। একইভাবে ঢাকা-লন্ডন রুটেও আমাদের যাত্রী চাহিদা প্রচুর। দেড় মাস আগে থেকেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। যাত্রী চাহিদা মিটিয়ে প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করতে আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে লন্ডনে সপ্তাহে ৬টি ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিমান বহরে উড়োজাহাজ এবং যাত্রী চাহিদা সত্ত্বেও দূরপাল্লায় ফ্লাইট পরিচালনা না করার কারণ জানতে চাইলে বিমানের এই কর্মকর্তা বলেন, বড় রুটের মধ্যে আমাদের প্রথম লক্ষ্য নিউইয়র্ক ও টরেন্টো। টরেন্টো রুটটি ভায়া আমেরিকা করার পরিকল্পনা আছে। তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ক্যাটাগরির উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত এ দুটি রুট চালু করা যাচ্ছে না। যাত্রী চাহিদা বিবেচনা করে আগামী জুনে ঢাকা-গুয়াংজু রুটে সপ্তাহে ৪টি, ২৭ অক্টোবর থেকে ঢাকা-মদিনা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিমানের সক্ষমতা বাড়াতে এ বছর আরও ৪টি দূরপাল্লার উড়োজাহাজ বহরে যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি ড্রিম লাইনার নিজেদের কেনা এবং বাকি দুটি উড়োজাহাজ দীর্ঘমেয়াদি লিজে আনা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর