সোমবার, ৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
গণফোরামের নতুন কমিটি রেজা কিবরিয়া সম্পাদক

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঝুঁকি নিতে হবে : ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রকৃত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সংসদ গঠনের লক্ষ্যে জনগণকে ঝুঁকি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মহাসংকটের মধ্য দিয়ে জাতিকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হতে চলেছে। কিন্তু দেশে কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র নেই। এ জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে। নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় তাদের এগিয়ে আসতে হবে। ঝুঁকি নিতে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের মতো নির্বাচন নয়, এ দেশের জনগণের ভোটে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংসদ গঠিত হতে হবে।’ রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে গতকাল গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। এর আগে গণফোরামের পুনর্গঠিত ১১১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াকে দলের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া নতুন কমিটিতে দলের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদকে দলের নির্বাহী সভাপতি করা হয়েছে। সংসদে যোগ দেওয়া গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খানকে দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য পদে বহাল রাখা হয়। ২০০৯ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসা সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুকে দলের নির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য রাখা হয়। তবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণকৃত কমিটির তালিকায় কোষাধ্যক্ষ, প্রচার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকসহ একাধিক পদাধিকারীর নাম খালি ছিল। সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এমপিদের সংসদে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা বারবার জানতে চাইলে এ বিষয়ে ড. কামাল পরে বলবেন বলে এড়িয়ে যান। এ সময় দলের দুই নির্বাহী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরামর্শ করে ড. রেজা কিবরিয়াকে জবাব দেওয়ার জন্য মাইক দেন। তিনি বলেন, ‘দেশের বড় সমস্যা গণতন্ত্রহীনতা। আপনারা?সেখান থেকে সরে যেতে চাইছেন। পাঁচজন সংসদে যোগ দেওয়াকে ফোকাস করতে চাইছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। পাঁচজন সংসদে যোগ দেওয়ায় সংসদ বৈধ হয়ে যাবে না।’ এ সময় মোকাব্বির খান প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্নের জবাবে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘তিনি কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিয়েছেন। তার জবাবে আমরা সন্তুষ্ট। এ জন্য তিনি কমিটিতে রয়েছেন।’ এ সময় তিনি বলেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে আগের কমিটি বহিষ্কার করেছে। এখন তিনি দলে ফিরতে চাইলে আবেদন করতে হবে। বিষয়টি দল বিবেচনা করে দেখবে। এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যেন দল ও দেশের মানুষের আশা পূরণ করতে পারেন, সে জন্য সবার দোয়া চান। তিনি বলেন, ‘আমার পিতা শহীদ এসএএমএস কিবরিয়া বলেছিলেন, সবচেয়ে গরিব দেশে সবচেয়ে গরিব মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা খুব কঠিন কাজ।’ এ সময় তিনি দেশে দিন দিন অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ দেশে দারিদ্র্য যেন একটা অপরাধ, যার জন্য নির্দোষকে শাস্তি দেওয়া হয়। যারা তাদের বাচ্চাকে দুই বেলা খাবার দিতে পারে না, তাদের কাছে উন্নয়নের জোয়ার ও প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর কথা রূপকথার মতো লাগে। এ সময় তিনি স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য সমান সুযোগকে দলের নীতি হিসেবে তুলে ধরেন। ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, জনগণকে এ দেশের মালিকানা ফেরত নিতে হবে। এ মুহূর্তে দেশের সাধারণ মানুষ সরকারকে ভয় পায়। দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার বিলুপ্তপ্রায়। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটের প্রশ্নে সারা পৃথিবীর সামনে প্রমাণিত হয়ে গেছে, প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা জনগণকে দিতে হবে। এসব উদ্দেশ্য পূরণে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণফোরাম নেমেছে। এটা সবার লড়াই। এই লড়াইয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদ সম্মেলনে দলের অপর নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আমসা-আ-আমিন, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিকুল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুশতাক আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর