বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার অর্থ পাচারের তথ্য খুঁজছে বাংলাদেশ ব্যাংক

এনসিসি ব্যাংক এমডি মোসলেহ উদ্দিনের দুর্নীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার অর্থ পাচারের তথ্য খুঁজছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে এবার বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য খুঁজছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে অবৈধভাবে অর্জিত ৩৫ কোটি টাকার খোঁজ পেয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ তিনি বিদেশে পাচার করেছেন কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ ও ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ এনবিআর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। এদিকে গতকাল এনসিসি ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় একাধিক বোর্ড সদস্য মোসলেহ উদ্দিনকে অপসারণ করার পক্ষে থাকলেও শীর্ষ একটি পক্ষ তাকে অপসারণ করতে চাচ্ছে না বলে জানা গেছে। বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে। জানা গেছে, মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সাল পর্যন্ত যমুনা ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে যোগ দেন। ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি এনসিসি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব নেন। এমডি হওয়ার পরেই তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অবৈধ সঞ্চয় বাড়তে থাকে। তবে যমুনা ব্যাংকে থাকা অবস্থায় বিভিন্নভাবে কর ফাঁকি দিয়ে তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে বেরিয়ে আসে মোসলেহ উদ্দিন ঘুষ দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসে মোসলেহ উদ্দিন ও তার স্ত্রী লুনা শারমিনের নামে একাধিক অ্যাকাউন্টে অবৈধ লেনদেন হয়েছে। এসব লেনদেন এনসিসি, যমুনা, প্রাইম, সিটি ও প্রিমিয়ার ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হয়েছে। অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট হিসাবগুলো জব্দ করেছে। বিএফআইইউর অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন। এসব দুর্নীতির তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের উৎস নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক ও এনবিআর কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ বিভাগ তার দুটি অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে অর্থ আসার প্রমাণ পেয়েছে। এনসিসি ব্যাংক ভবন শাখায় এমডি হিসেবে প্রতি মাসের বেতন বাবদ জমা হয় ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪০ টাকা। একই শাখায় তার বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব (এফসি অ্যাকাউন্ট) রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সময়ে ৫ হাজার ডলার জমা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি জমা হয় ৮ হাজার ডলার। কারা এবং কেন এই অর্থ দিয়েছে তার কোনো উৎস দেখাতে পারেননি এমডি। শুধু বিদেশ থেকে অর্থ এসেছে নাকি বিদেশে তিনি অর্থ পাঠিয়েছেন এখন সেটি খতিয়ে দেখা শুরু করেছে বিএফআইইউ, দুদক ও এনবিআর। জানা গেছে, ২০১৫ সালে এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত এমডি হিসেবে যমুনা ব্যাংক থেকে এনসিসি ব্যাংকে যোগদান করার পরেও যমুনা ব্যাংকে নিজের ও স্ত্রী লুনা শারমিনের সঙ্গে যৌথ একটি হিসাবে লেনদেন করেছেন। যেখানে বিভিন্ন সময় একাধিক ব্যক্তি টাকা জমা দিয়েছেন। এসব টাকা আবার তিনি শেয়াবাজারেও নিয়েছেন। এসব অ্যাকাউন্টে কিসের টাকা জমা বা উত্তোলন করেছেন তার কোনো উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। এই অ্যাকাউন্টে মোট ৯ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টে ৯ কোটি টাকার চার কোটি টাকা জমা করেছে এনসিসি ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। এই চার কোটি টাকা জমি বিক্রির অর্থ হিসেবে নিয়েছেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির কাছে জমি বিক্রি করেছেন ৫১ লাখ টাকায় এবং গ্রহণ করেছেন চার কোটি টাকা। যা পুরোপুরি অবৈধ। শেয়ারবাজারে চারটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার নামে। এগুলো হলো- সিটি ব্রোকারেজ, এনসিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ, সিএসএমএল সিকিউরিটিজ ও ই-সিকিউরিটিজ। এসব অ্যাকাউন্টে তার বিনিয়োগ রয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া সিটি ব্যাংকে মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, তার স্ত্রী লুনা শারমিনের আলাদা ও যৌথ মিলে তিনটি হিসাবে সাড়ে ৬ কোটি টাকা রয়েছে। প্রাইম ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখায় তার নামে থাকা হিসাবে জমা হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকে থাকা হিসাবে জমা হয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা। এসব অর্থের বৈধ কোনো উৎস তার নেই। এত টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে থাকার পরেও আয়কর বিবরণীতে তিনি লিখেছেন তার কাছে মাত্র দুই কোটি টাকা  রয়েছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছেন এনসিসি ব্যাংকের এমডি। এনবিআরে দাখিল করা বিবরণীতে বলেছেন, তার কাছে সব মিলে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা জমা আছে। বিষয়টি জানতে চাইলে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মো. রাজি হাসান বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্ত করে দুদক ও এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেবে। আমরা অবৈধ হিসাবের সব তথ্য খতিয়ে দেখছি। অর্থ পাচার বিষয়টি দুদক ও এনবিআরের সঙ্গে তদন্ত করা হবে।

সর্বশেষ খবর