বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

তরল দুধ ভয়ঙ্কর

৯৬ নমুনার ৯৩টিতেই ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান, হাই কোর্টে প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজারে প্রচলিত তরল দুধের ৯৬ নমুনার ৯৩টির মধ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে উল্লেখ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে হাই কোর্টে। তবে কোন কোন কোম্পানির দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে এর সঙ্গে কারা জড়িত তাদের ঠিকানাসহ তালিকা আগামী ১৫ মের মধ্যে হাই কোর্টে দাখিল করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম। পরে আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘প্রতিবেদনে কত শতাংশ দুধে ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে তা উল্লেখ থাকলেও এসব দুধ কোন কোন কোম্পানির তা উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং জড়িতদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা আদালতে দাখিল করতে বলেছে।’ আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাঁচা তরল দুধে ৯৬টি নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অণুজৈবিক বিশ্লেষণ রিপোর্ট অনুযায়ী ৯৩টি নমুনায় টিপিসি ও কলিফরম কাউন্ট ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান এবং ১টি নমুনায় সালমোনেলা পাওয়া গেছে। রাসায়নিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী ৫টি নমুনায় সিসা, ৩টিতে আফলাটক্সিন, ১০টিতে টেট্রাসাইক্লিন, ১টিতে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও ৯টিতে পেস্টিসাইট (এন্ডোসালফান) ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যাকেটজাত তরল দুধের ৩১টি নমুনার (দেশি ২১ ও আমদানি ১০টির) মধ্যে ১৭টি দেশি দুধের নমুনায় টিপিসি ও কলিফরম কাউন্ট, ১৪টিতে মোল্ডস ও আমদানিকৃত ১টির নমুনায় কলিফরম কাউন্ট ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান। রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশি দুধের একটি নমুনায় আফলাটক্সিন, ৬টিতে টেট্রাসাইক্লিন ও আমদানি দুধের ৩টিতে টেট্রাসাইক্লিন ক্ষতিকর মাত্রায় রয়েছে।

দইয়ের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দইয়ের ৩৩টি নমুনার ১৭টিতে টিপিসি, ৬টিতে পলিফরম কাউন্ট, ১৭টিতে ইস্ট/মোল্ড ও ১টিতে সিসা ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান। পশুখাদ্যের ৩০টির মধ্যে ১৬টিতে ক্রোমিয়াম, ৪টিতে আফলাটক্সিন, ২২টিতে টেট্রাসাইক্লিন, ২৬টিতে এনরোফ্লক্সাসিন, ৩০টিতে সিফরোফ্লক্সাসিন ও ২টিতে পেস্টিসাইট (এন্ডসালফান) ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান রয়েছে। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে গরুর দুধ, দই ও গোখাদ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, সিসা রয়েছে তা নিরূপণের জন্য একটি জরিপ পরিচালনার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে খাদ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণী সচিব, কৃষি সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সব সদস্য, কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি ও বিএসটিআই চেয়ারম্যানকে জরিপের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এরই ধারাবাহিতায় গতকাল মামলাটি শুনানির জন্য আসে। এর আগে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের আলোকে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওইদিন আদেশ দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর