রবিবার, ১২ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভর্তি বাড়ছে পাবনা হাসপাতালেও

এস এ আসাদ, পাবনা

পাবনা মানসিক হাসপাতালে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এদিকে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সুস্থ রোগীদের বাড়ি ফিরিয়ে না নেওয়ায় তারা আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আবার হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালে  চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরে যেতে পারছেন না প্রায় ২১ জন রোগী। তাদের কারও ঠিকানা ভুল, আবার অভিভাবক বা পরিবার তাদের রোগীকে বাড়ি নিতে রাজি নয় বলে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। এমন রোগীদের নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পড়েছেন বিপাকে। তাদের চিকিৎসা খরচ মেটানোর কেউ নেই। তাছাড়া তারা শয্যা খালি না করার কারণে ওই শয্যায় নতুন রোগীও ভর্তি করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে থাকার কারণে তারা এখানকার চিকিৎসক ও কর্মীদের আপনজন হয়ে উঠেছেন। হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মতে, এই ২১ জনের মধ্যে অনেকে ১২ থেকে ৩০ বছর ধরে এখানে অবস্থান করছেন।

তাদের মধ্যে ৫ নং ওয়ার্ডের সাঈদ হোসেন ১৯৯৬ সালে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হন মাত্র ৩৬ বছর বয়সে, বর্তমানে তার বয়স ৫৬। ভর্তির সময় তাকে ঢাকার মগবাজার নয়াটোলার ২৫৪/এ হেলেনাবাদ ঠিকানা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। বাবার নাম আবুল হাশেম মিয়া। রোগী সুস্থ হওয়ার পরে অনেকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এদিকে পেয়িং বেডের রোগী হওয়ায় সরকারি পাওনাদি পরিশোধ না করায় কর্তৃপক্ষ তাকে সাধারণ বেডে স্থানান্তর করে।

চিকিৎসকরা জানান, সুস্থ হওয়া অনেক রোগী নতুন রোগীদের সঙ্গে থাকার কারণে এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে পুরনো রোগীরাই ঘুরেফিরে আবার ভর্তি হচ্ছেন মানসিক রোগের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক এই হাসপাতালে।

এর কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর সেখানে পরিবার থেকে প্রয়োজনীয় যত্ন ও ভালোবাসা না পাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত খাবার ও ওষুধ না খাওয়ার জন্যও এমনটি হচ্ছে।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা মানসিক হাসপাতালে গত ১০ বছরে ভর্তি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার রোগী। আর কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজারের বেশি রোগীকে।

এ পরিসংখ্যানে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সুস্থ হওয়া অনেক রোগীই বারবার ফিরছেন হাসপাতালে। তাদের মধ্যে অনেকেই ৩ বার থেকে শুরু করে ১৫ বার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নজির রয়েছে বলে জানান হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ অংশপতি বিশ্বাস।

তিনি জানান, পাবনা মানসিক হাসপাতালের বহির্বিভাগে গত ১০ বছরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ লাখ ২২ হাজার ৮৫১ জন মানসিক রোগী। তাদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা রোগীর সংখ্যা প্রায় সমান।

বারবার একই রোগী ফিরে আসার কারণ সম্পর্কে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবদুল বারী বলেন, সম্পূর্ণ ভালো হওয়া বলা যাবে না, যখন একটু সুস্থ হয় রোগীদের তখনই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে যাওয়ার পর তারা হয়তো ঠিকমতো ওষুধ ও খাবার খাওয়ায় না। ফলে আবার আগের মতো হয়ে যায়। ওইসব রোগী কিছু দিন পর আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুশান্ত কুমার দাস বলেন, হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় শয্যা সংখ্যা কম। তারপর সুস্থ হওয়ার পরও বা ঠিকানা ভুল হওয়ার কারণে যাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না তাদের নিয়ে আমরা খুবই বিপাকে রয়েছি।

অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এই হাসপাতালে উন্নত সেবা প্রদানের চেষ্টা থাকে। তবে অব্যাহত রোগীর চাপে আমরা কিছুটা অসহায়। অপরদিকে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার রোগীকে বহির্বিভাগে সেবা দিতে হচ্ছে। পাঁচ বছর আগেও মাসে দেড় থেকে দুই হাজার রোগীকে সেবা দিতে হয়েছে। কেন মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে রোগীও বাড়ছে। পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত কারণে অবসাদ, দুশ্চিন্তাসহ বিভিন্নভাবে রোগী বৃদ্ধি হচ্ছে বলেও জানান এই চিকিৎসক।

সর্বশেষ খবর