রবিবার, ১২ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ কানাডার সমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ কানাডার সমান

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কানাডার সমান। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অংশীদার হবে এমন প্রভাবশালী ২০টি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। ৬ মে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে আইএমএফ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ করেছে, এর আলোকে ব্লুমবার্গের করা বিশ্লেষণে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এ তথ্য উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ওই বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগামী অর্থবছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আর সেই  প্রবৃদ্ধিতে দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কানাডা অবদান রাখবে ১ শতাংশ। থাইল্যান্ড এবং স্পেনও ১ শতাংশ অবদান রাখবে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া এবং প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর সমালোচনার জবাবে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ব্লুমবার্গের গবেষণার তথ্যের ভিত্তিতেই আমি বলছি, প্রবৃদ্ধিতে আমরা কানাডার সমান। স্পেন-থাইল্যান্ডের সমান। আর এটা আমার কথা নয়, আইএমফের কথা। বিশ্বব্যাংকের কথা। শুধু তা-ই নয়, কয়েক দিন আগে ফিজিতে এডিবির বার্ষিক সম্মেলনেও বলা হয়েছে, চমকপ্রদ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।’ সমালোচনার জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তাদের কাজ তারা করবে, আমার কাজ আমি। তবে তাদের হোমওয়ার্ক করে তথ্য দেওয়া উচিত। আমি তথ্য নিয়ে কথা  বলি। আমি মানে বাংলাদেশ। আমি সঠিক তথ্যের ভিত্তিতেই কথা বলি। আমি কারও নাম বলছি না, তবে অনেকেই অনুমানের ভিত্তিতে কথা বলেন।

আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আসুন, গোলটেবিল আলোচনায় বসি। আমি বা বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছি, সেটি যে সঠিক তা প্রমাণ করে ছাড়ব। দুঃখ একটাই, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি আমাদের প্রশংসা করছে আর আমাদের এখানকার কয়েকজন সেটি মেনে নিচ্ছে না বা মেনে নিতে পারছে না।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা যেভাবে চান সেভাবেই মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনে পরিবর্তন করা হচ্ছে। আর ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পরই বোঝা যাবে প্রস্তুতি আছে কি না। সাংবাদিকদের ব্রিফ করার আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়াসহ প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বিদেশি সহায়তা ও অনুদানের ওপর নির্ভরতা কমাতে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য তিন লাখ ৯৭ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। এসবের মধ্যে এনবিআর তিন লাখ ৪১ হাজার ৭০০ কোটি, এনবিআর-বহির্ভূত খাত থেকে ১৭ হাজার কোটি এবং করবহির্ভূত খাত থেকে ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করতে বলা হয়েছে। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নিজস্ব সম্পদের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকার কর ও ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়াতে চায়। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে এক লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

 বৈঠক সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরেই সরকার বিদেশি সহায়তা ও অনুদানের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে। আগামী জুলাইয়ে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইনে পাঁচ শতাংশ, সাত শতাংশ ও ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হবে। আসন্ন বাজেটে আয়কর ও করপোরেট কর কমানোর ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে ট্যাক্স নেটের আওতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হতে পারে। বাজেটে ঘাটতি পাঁচ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা ভাবছে সরকার। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ১৩ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। আর রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে বিকল্প উপায় না থাকায় নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে। দেশে কর জিডিপির হার ১০ শতাংশের বেশি নয়, অথচ অন্যান্য দেশে ১৫ শতাংশের বেশি হয়। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে প্রত্যেককে ভ্যাট দিতে হবে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি।

সর্বশেষ খবর