শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভারতে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী

বিরোধী জোটে তোড়জোড়, ছাড় দেওয়ার ঘোষণা কংগ্রেসের

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী

ভারতের সপ্তদশ লোকসভা ভোটের শেষ পর্যায়ের আগেই কংগ্রেস ঘোষণা করে দিল আঞ্চলিক দলের স্বার্থে তারা প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য পীড়াপীড়ি করবে না। কাল রবিবার শেষ দফার ভোট। একদিকে শাসক বিজেপি যেমন নিশ্চিত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে তারাই ফের ক্ষমতা দখল করছে। অন্যদিকে লোকসভার ফল ত্রিশঙ্কু হবে ধরে নিয়েই ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী বিভিন্ন শরিক দলের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন। তিনিই ভবিষ্যতের সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন।

ভারতের সংসদ রাজ্যসভায় বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেছেন, কংগ্রেস নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রয়োজনে তারা কোনো আঞ্চলিক দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী পদে মেনে নেবে। তিনি বলেন, যদি সবাই মিলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী পদের প্রস্তাব দেয় তাহলেই আমরা প্রধানমন্ত্রী পদের কথা বিবেচনা করব। এ নিয়ে কোনো গোঁ ধরে থাকব না। তিনি এও বলেন, ‘গোটা দেশের প্রচার থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ বা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। ফলাফল হবে ত্রিশঙ্কু। তখন আঞ্চলিক দলের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য সব শরিক দলকে একত্রিত করা, যাতে তারা বিজেপির দিকে চলে না যায়। কংগ্রেসের মতে, বিজেপি ১৫০-১৬০ আসন পাবে। কংগ্রেস পেতে পারে সর্বোচ্চ ১৩০। অবশিষ্ট ২৪২টি আসন পাবে আঞ্চলিক দলগুলো। তবে এবার বিজেপি শরিকরা তেমন ভালো ফল করবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২। গুলাম নবি আজাদ স্পষ্ট বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না। আঞ্চলিক দলের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের মায়াবতী এবং পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার। মমতা ইতিমধ্যেই তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক দলের উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি রেখেছেন প্রকাশ্যেই। অন্দ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু যোগাযোগ শুরু করেছেন অন্য দলের সঙ্গে। কংগ্রেস দায়িত্ব দিয়েছে মহারাষ্ট্রের প্রবীণ নেতা শারদ পাওয়ারকে উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন চন্দ্র পট্টনায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে।

মোদি-অমিতাভকে কটাক্ষ প্রিয়াঙ্কার : কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক এবং পূর্ব-উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর অভিমত, মোদির থেকে অমিতাভ বচ্চন ভালো প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। শুক্রবার প্রচারণার শেষ দিনে উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী ললিতেশ ত্রিপাঠীর সমর্থনে এক রোডশোতে অংশ নেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, ‘আপনারা এবার বুঝুন যে আপনারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অভিনেতাকে (মোদি) প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছেন, এর থেকে ভালো হতো আপনারা যদি অমিতাভ বচ্চনকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতেন। আপনাদের জন্য তারা কিছুই তো করেননি।’ অমিতাভকে নিয়ে প্রিয়াঙ্কার এ মন্তব্যের পরই রাজনীতিতে ফিসফাঁস শুরু হয়েছে।

 উল্লেখ্য, বলিউড সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চনের ছোট বেলার বন্ধু ছিলেন প্রিয়াঙ্কার পিতা রাজীব গান্ধী। মূলত রাজীবের অনুরোধেই ১৯৮৪ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন অমিতাভ। ওই বছরই অষ্টম লোকসভা নির্বাচনে এলাহাবাদ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন অমিতাভ এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন। কিন্তু রাজনীতিতে খুব অল্প সময় কাটান তিনি। বোফর্স কামান মামলায় অমিতাভ বচ্চনের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরই রাজনীতিকে ‘মলকু ’-এর সঙ্গে তুলনা টেনে মাত্র তিন বছরের মাথায়ই সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। সেসময় একটি সর্বভারতীয় পত্রিকায় অমিতাভ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বোফর্স মামলায় অভিযুক্ত থাকার ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সেই পত্রিকার বিরুদ্ধেও মামলা করেন অমিতাভ। যদিও পরবর্তীতে অমিতাভের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। তবু ওই ঘটনার পর থেকেই গান্ধী পরিবার ও কংগ্রেস থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন অমিতাভ। আর ১৯৯১ সালে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে রাজীব গান্ধীর হত্যার পর ওই সম্পর্কে আরও চিড় ধরে। গান্ধী ও বচ্চন পরিবারের সম্পর্কে আরও তিক্ততা আসে যখন অমিতাভের স্ত্রী অভিনেত্রী জয়া বচ্চন সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন এবং অমিতাভকে মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটের পর্যটন ব্র্যান্ড আম্বাসেডর নিযুক্ত করা হয়।  মির্জাপুরের রোডশো থেকে নোট বাতিল, কৃষকদের দুরবস্থা, ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি নিয়েও মোদিকে তোপ দাগেন প্রিয়াঙ্কা। নির্বাচন যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে তখন দেশটির দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে বাগ্যুদ্ধ চরমে উঠেছে। বৃহস্পতিবারই প্রিয়াঙ্কার প্রশ্ন ছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন তার ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি-সেখানে হৃদয়টা কোথায় আছে?’ বৃহস্পতিবারই একটি সর্বভারতীয় বেসরকারি হিন্দি টিভি চ্যানেলকে (ইন্ডিয়া টিভি) সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির সময়সীমা শেষ।’ বিজেপির দাবি, গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশি আসন নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে চলেছে এনডিএ। ফলে আসন্ন পরাজয় অনুভব করেই বিরোধীরা উল্টাপাল্টা মন্তব্য করছে।

সর্বশেষ খবর