শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন

বৃষ্টি বাধার পরও টি-২০ স্টাইলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়

মেজবাহ্-উল-হক

অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন

শিরোপা হাতে উৎফুল্ল টিম টাইগা - এএফপি

রূপকথার এক ফাইনাল! নাটকীয় এক ফাইনাল। ‘অম্ল-মধুর বৃষ্টি’ এবং ‘ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা’ মিলেমিশে গত রাতে ডাবলিনে যেন মঞ্চস্থ হলো এক মহানাটক! শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজে মাশরাফিরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জয় টাইগারদের। একেই বলে ‘লাকি সেভেন’! একে একে ছয়বার আন্তর্জাতিক                টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। শিরোপার খুব কাছে গিয়েও বার বার ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। তবে এবার টাইগাররা নিজে হাতে নিজেদের ভাগ্য গড়ে নিলেন। উত্তেজনা, আশঙ্কা, টেনশনকে ছুড়ে ফেলে ঠা-া মাথায় শিরোপা জিতল মাশরাফি বাহিনী। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২১ বছর আগে ঠিক এই দিনেই কেনিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ সেই ১৭ মে-তেই প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়। সত্যিই কাকতালীয় এক ঘটনা। গতকাল বৃষ্টি যখন শুরু হয় তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ছিল ২০.১ ওভার বিনা উইকেটে ১৩১ রান। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৫০ ওভারের ম্যাচ কমে আসে ২৪ ওভারে। বাকি ৩.৫ ওভারে অর্থাৎ ২৩ বলে মাত্র ২১ রান করে উইন্ডিজ। সব মিলে ২৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ১৫২ রান। কিন্তু যেহেতু প্রথম ২০.১ ওভারে ক্যারিবীয়রা ৫০ ওভার খেলার টার্গেট নিয়ে ব্যাটিং করেছে এবং কোনো উইকেটও হারায়নি তাই বৃষ্টি আইনে তাদের মোট স্কোরের সঙ্গে বাড়তি ৫৮ রান যোগ হয়ে টাইগারদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১০ রান। মোসাদ্দেক হোসেন ও সৌম্য সরকারের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে অসাধারণ এক জয়। স্বপ্নিল এক জয়ে ফাইনালের গেরো খুলে ফেলল বাংলাদেশ।

ডাবলিনে কাল সাইক্লোন গতিতে ব্যাটিং করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মাত্র ২৪ বলে খেলেন ৫২ রানের ইনিংস। দুই বাউন্ডারির সঙ্গে ৫টি বিশাল ছক্কার মার ছিল তার ইনিংসে। ১৪৩ রানের মাথায় ৫ উইকেট পড়ে গেলেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে তার দুরন্ত ৭০ রানের অনবদ্য জুটি বাংলাদেশকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়। তবে বাংলাদেশের জয়ের ভিতটা গড়েছিল সৌম্যর মারকাটারি ব্যাটিং। ৪১ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছেন এই ড্যাসিং ওপেনার। ৯টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি ছক্কা। ত্রিদেশীয় সিরিজে তিন ম্যাচে ব্যাটিং করে তিন হাফ সেঞ্চুরি করলেন সৌম্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লিগ পর্বের প্রথম ম্যাচে ৭৩ রান করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ৫৪ রান। ফাইনালে আবারও সেই উইন্ডিজের বিরুদ্ধে অর্ধশত। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শেষ দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন সৌম্য। তবে বিশ্বকাপের আগে তার অনুশীলনটা যে ভালোই তা বলাই যায়। ইনজুরির কারণে গতকাল বাংলাদেশের একাদশে ছিলেন না সেরা তারকা সাকিব আল হাসান। ম্যাচের আগে এটা ছিল টাইগারদের জন্য বড় ধাক্কা। গত বছর এশিয়া কাপের ফাইনালেও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার খেলতে পারেননি। সাকিববিহীন ফাইনালে গতকাল টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথম কয়েক ওভার বেশ আটকেই রেখেছিলেন ক্যারিবীয় দুই ওপেনারকে। কিন্তু উইকেট নিতে না পারায় ধীরে ধীরে মারমুখী হয়ে পড়েন দুই ক্যারিবীয় তারকা শাই হোপ ও সুনীল অ্যামব্রিস। কোনো উইকেট না হারিয়েই তারা করেছেন ১৩১ রান। সেটাও কিনা মাত্র ২০.১ ওভারে। ওপেনার শাই হোপ অপরাজিত ছিলেন ৬৮ রানে। ৫৯ রানে ব্যাট করছিলেন সুনীল অ্যামব্রিস। শেষ পর্যন্ত ৭৪ রানে আউট হন হোপ কিন্তু ৬৯ রানে অপরাজিতই ছিলেন অ্যামব্রিস। ক্যারিবীয়রা হয়তো জানতই না যে এবার টাইগাররা ইউরোপের মাটিতে পা রেখেছে এভারেস্টরূপী বিশ্বকাপকে জয় করার লক্ষ্য নিয়ে, সেখানে এমন ছোটখাটো শৃঙ্গ আর কি এমন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে! পারেওনি। হেসেখেলেই শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর